স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং এবং লোভাছড়া পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে এবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ৯ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সিলেটে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল এবং পাথর সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে।
সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ। তারা এ কর্মসূচির পরেও দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১৭ ডিসেম্বর আলোচনা সভার মাধ্যমে সিলেট বিভাগ জুড়ে অনির্দিষ্টকালের কঠোর কর্মসূচির ডাক দেয়ারও হুঁশিয়ারি করেন।
লিখিত বক্তব্যে পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ও সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্র“পের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ১ বছর ধরে সিলেটের সবকটি পাথর কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। মূলত পরিবেশ রক্ষার অজুহাতে একটি চক্রের ইন্ধনেই দেশীয় এ সম্পদ আহরণ বন্ধ রেখে নিম্নমানের বিদেশী পাথর আমদানি করে মধ্যস্বত্ব ভোগ করছে। অথচ সিলেটের পাথর কোয়ারীগুলোর পাথরই দেশের নির্মাণ শিল্পের অন্যতম প্রাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন পাথর আহরণ, বিক্রয় ও পরিবহণের সাথে জড়িত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। বিশেষ করে সিলেটের কোয়ারীগুলো স্থবির হয়ে পড়ায় প্রায় ৬ লাখ পাথর শ্রমিক বেকার হয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। আর এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছেন।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পাথর কোয়ারী খুলে দেয়ার দাবিতে পাথর আহরণ, বিক্রয় ও বিপণনসহ এই খাতে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে গঠিত হয়েছে বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সিলেটের পাথর কোয়ারীগুলো থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর আহরণের অনুমতি প্রদানের দাবিতে গত প্রায় ৩ মাস ধরে এই সংগঠন আন্দোলনও চালিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী, খনিজ সম্পদ মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ সকল পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের কাছে একাধিকবার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া মানববন্ধন, সভা-সমাবেশও অব্যাহত রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে ৭২ ঘন্টার মধ্যে সিলেটের পাথর কোয়ারী খুলে দেয়ার দাবিতে সিলেটের জেলা প্রশাসক মহোদয়কে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। কিন্তু, এই আল্টিমেটাম অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কোনরূপ নির্দেশনা বা ঘোষণা প্রদান করেননি। ফলে, বাধ্য হয়ে এ নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করতে বলেছেন তারা।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারী থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখার ব্যপারে মাননীয় হাইকোর্টের একটি নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু, সিলেটের জেলা প্রশাসক বিজ্ঞ উচ্চ আদালতের ঐ নির্দেশনার প্রতিও কোনোরূপ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেননি বা করছেন না। যা উচ্চ আদালতের রিট পিটিশন- ২৫৯৯/২০১৭ এর আদেশ পরিপন্থী ও বিজ্ঞ উচ্চ আদালতকে অবমাননার শামিল। উচ্চ আদালতের এই আদেশ অমান্য করায় আমরা ইতোমধ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দরখাস্ত দাখিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে।’ সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ তাদের সকল কর্মসূচিতে সিলেটের পরিবহণ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষসহ সর্বস্তরের সিলেটবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের আহবায়ক আব্দুল জলিল মেম্বার, সদস্য সচিব মো. নুরুল আমিন, সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার, সাধারণ সম্পাদক মো. আমির উদ্দিন, জাফলং পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাবুল মিয়া, সহ-সভাপতি ইসমাইল মিয়া, সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক পুলক কবির চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শওকত আলী বাবুল, পাথর ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, মশিউর রহমান প্রমুখ।