কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়মুক্তি বলে কিছু নেই বলেছেন রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। একই সঙ্গে যারাই দুর্নীতি করবে,তাদেরই জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। অনিয়মকে যারা নিয়ম বানাতে চায়, তাদের ছাড় নেই বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ২১ নভেম্বর দুদকের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। দায়মুক্তির ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে অনুসন্ধান হয়। প্রমাণ না মিললে সেই অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয় বা পরিসমাপ্তি হয়। কিন্তু নথিভুক্ত করার মানে দায়মুক্তি হতে পারে না। নতুন করে অভিযোগ উঠলে আবারও অনুসন্ধান হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আর অভিযোগের প্রমাণ মিললে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুদক সেভাবেই কাজ করে। সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযান নিয়ে চেয়ারম্যান বলেন,দুর্নীতিবিরোধী যে কোনও অভিযানকেই স্বাগত জানায় দুদক। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক তার নিজস্ব পন্থাতেই কাজ করছে। স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতিবাজদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৫৯ জনের তালিকা হয়েছে। এই তালিকা আরও দীর্ঘ হবে, হচ্ছে। তবে তালিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের সবাই দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত হবে কিনা, তা এখনই বলা যাবে না। অনুসন্ধান, তদন্ত শেষেই শুধু এ বিষয়ে বলা সম্ভব। দুদক চেয়ারম্যান বলেন,দুর্নীতিবাজদের খোঁজ পেতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত প্রতিবেদন আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখি। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ইকবাল মাহমুদ বলেন,বাংলাদেশ ব্যাংক চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। সংখ্যাটা কম নয়। আর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার ঘটনাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাদের বিষয়ে জানতে চাই। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে তথ্য চেয়েছি। তথ্য পাওয়ার পর এ নিয়ে পর্যালোচনা হবে। যাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের তৈরি করা তালিকাও মিলিয়ে দেখা হবে। সব কাজ দুদক সমন্বিতভাবেই করতে চায়।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ব্যক্তির রাজনৈতিক,সামাজিক বা পেশাগত পরিচয় দুদকের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। কেউ যদি সংবিধান লঙ্ঘন করে কালো টাকা বা অবৈধ সম্পদ অর্জন বা পেশিশক্তি ব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে, তাহলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। তবে সফলতা যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে। সীমাবদ্ধতার কারণে হয়ত কাক্সিক্ষত মাত্রায় সফলতা আসেনি। তবে প্রাপ্তি একেবারে কম নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন,দুদকের মামলার কারণে সাড়ে ৩ বছরের খেলাপী ঋণের ১৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত এসেছে। এ রকম আরও অনেক ঘটনা আছে উল্লেখ করার মতো। দুর্নীতিবাজরা পার পায়নি।
দুদকের কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই তাকে নোটিস পাঠায় না দুদক। খতিয়ে দেখে। অনেক অভিযোগ ভিত্তিহীনও প্রমাণ হয়। আমরা যথেষ্ট খোঁজ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের কর্মকর্তারা প্রয়োজনে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার কাছেও যাচ্ছেন। সবকিছু ত্রুটিমুক্তভাবে করার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত করতে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি মামলা হয় তাহলে চার্জশীট পর্যন্ত যেতে হবে। যার বিরুদ্ধে মামলা, তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।