বিদ্যুৎ না থাকায় নগরীতে পানির তীব্র সংকট, চরম ভোগান্তি

45
কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের ফলে প্রায় দুদিন থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। এলাকাবাসীর কথা চিন্তা করে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে পানি বিতরণ করছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
কুমারগাঁওয়ে গ্রিড লাইনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পানির জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। বাসা-বাড়িতে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। পানির জন্য মানুষের মধ্যে চলছে হাকার। অনেকে বাসা-বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পানির দোকানগুলোতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। পানির সন্ধানে মানুষ ছুটছেন হন্তদন্ত হয়ে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা মোমবাতির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এদিকে তীব্র পানির সংকটেও কিছু মানবিক মানুষ এগিয়ে এসেছেন মানুষের পাশে। নগরের মণিপুরি রাজবাড়ি এলাকার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু নিজ উদ্যাগে স্থানীয়দের পানি সরবরাহ করছেন। তিনি বলেন, সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মানুষকে পানি দিয়েছি। বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত মানুষকে আমি পানি সরবরাহ করব। সুবিদবাজার পয়েন্টের মিতালি কমপ্লেক্সের সামনে স্থানীয় একটি এক পরিবার মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা জেনারেটরের মাধ্যমে পানি তুলে মানুষের মাঝে পানি সরবরাহ করছেন। গত রাতেও তারা ১ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি নিতে সুবিদবাজার পয়েন্টের মিতালি কমপ্লেক্সের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। দূরদূরান্ত থেকে তারা এখানে ছুটে আসছেন। কারও হাতে কলস, কারও হাতে জগ, বালতি, ড্রাম ইত্যাদি। সারিবদ্ধভাবে এখান থেকে পানি সংগ্রহ করে ফিরছেন একজন একজন করে। পানি সংগ্রহের পর তাদের মুখে দেখা গেছে তৃৃপ্তির হাসি। যেন তারা যুদ্ধ জয় করেছেন।
পানি নিতে আসা ছালেহা বেগম নামের এক নারী বলেন, পানির অভাবে গোসল করতে পারিছি না। খুব কষ্ট করছি রাত থেকে। তারা ফ্রি পানি দিয়া যে উপকার করছইন। রাইত থাকি ঘরে পানি নাই। খুব কষ্ট করছি। এখন তো তুড়া নিলাম। রাতে কারেন্ট না আইলে কিতা করতাম চিন্তা কররাম।
ছালেহার মতো চিন্তা সুমন আহমদেরও। সুমন আহমদ পেশায় রিকশা চালক। তিনি এখানে এসছেন পানি নিতে। বলেন, আমরা তো গরীব মানুষ। টেকা দিয়া পানি কিনি খাওন কষ্ট অইব। এরা ফিরি দিতাছে এর লাগি খুব উপকার হচ্ছে। লাইতে (রাতে) যদি কারেন্ট না আইয়ে (না আসে) কিলা পানি পাইমু এই চিন্তা করতাছি। রাতে কিতা আবার পানি দিব নি মাইনষে ফিরি (ফ্রি)। নগরের প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতেই এখন পানির জন্য হাহাকার চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওলদারপাড়া, শিবগঞ্জ, রায়নগর, কুমারপাড়া, ঝরনারপাড়, শেখঘাট, চালিবন্দর, লামাবাজার, নগরের বাগবাড়ি, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, কালীবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানির অভাবে গৃহস্থালি কাজ থেকে শুরু করে গোসল ও নিত্যক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছেন না। এসব এলাকায় সুপেয় পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, টানা বিদ্যুৎ না থাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে কোনো পানি সরবরাহ করা যায়নি। আমরা মানুষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে নগরীতে মাইকিং করছি।