ক্রীড়াঙ্গন রিপোর্ট :
শৈশবেই আর্জেন্টিনার রোজারিও ছেড়ে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনায় পাড়ি দেন লিওনেল মেসি। সেই থেকে ক্যাম্প ন্যু’ই মেসির ঘরবাড়ি। তবে পুরোটা সময় বিষয়টা এমন ছিল তা নয়। ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে নাকি প্রিয় ক্লাব ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন এই ক্ষুদে জাদুকর। তবে তা হয়নি। এখন সেই মেসি বার্সার অধিনায়ক।
মেসির বার্সেলোনা অধ্যায় দীর্ঘায়িত করার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল প্রয়াত কোচ টিটো ভিলানোভার। ২০১৪ সালের এপ্রিলে ক্যাম্প ন্যু ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়ে ফেলেছিলেন মেসি। কিন্তু ভিলানোভার কারণেই তা আর হয়নি। মৃত্যুর মাত্র ছয় দিন আগে তিনিই মেসিকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে বার্সায় থেকে যেতে রাজি করিয়েছিলেন। এমন তথ্য জানিয়েছেন বার্সেলোনায় ভিলানোভার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জর্দি রৌরা।
বার্সেলোনার রেডিও কানালের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে রৌরা বলেন, ‘মেসি কিছুতেই বার্সেলোনায় থাকতে রাজি হচ্ছিল না আর টিটোও হাল ছাড়তে নারাজ। তারা দুজনে সাক্ষাৎ করে কয়েক ঘণ্টা কথা বলে। মেসি শেষ পর্যন্ত (থেকে যেতে) রাজি হয় আর আমরা আশা করি তা যেন আরও বহু বছরের জন্য হয়।’
ভিলানোভার প্রশংসা করতেও কার্পণ্য করেননি তার সাবেক সহকারী। কেন মেসিদের সাবেক গুরুকে বার্সেলোনার ‘স্পেশাল’ কোচ বলা হয় তাও ব্যাখ্যা করেন তিনি। তার মতে, ভিলানোভা ছিলেন একদম সহজ এবং সোজাসাপ্টা মানুষ। তার ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। এটাই তাকে স্পেশাল বানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ভিলানোভার চিরবিদায়ের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। সাবেক গুরুকে স্মরণ করে বার্সেলোনার অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন ক্লাব সভাপতি হোসেপ মারিয়া বার্তমেউ, মেসি, সার্জিও বুসকেতস ও জর্দি আলবা। এক ইন্সটাগ্রাম পোস্টে মেসি লিখেছেন, ‘তিনি সবসময় আমাদের সাথে আছেন।’
বার্সার ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মৌসুমে ক্লাবের সাবেক (বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটির কোচ) পেপ গার্দিওলার বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন ভিলানোভা। পরে নিজের একক মেয়াদেও বার্সাকে লা লিগার চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিলেন।
লা লিগায় ভিলানোভার অধীনে ১০০ পয়েন্ট অর্জন করে অসাধারণ এক মৌসুম কাটিয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু বার্সার যুব দলের এই সাবেক খেলোয়াড় ২০১৪ সালে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ওপারে পাড়ি জমান।
২০১৩/২০১৪ মৌসুমে লা লিগায় ৩০ গোল করেছিলেন মেসি। ২০০৮/০৯ মৌসুমের পর যা তার সর্বনিম্ন। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন বার্সার বর্তমান প্রাণভোমরা। কিন্তু ভিলানোভার সঙ্গে ওই এক সাক্ষাতেই সব হিসেব পাল্টে যায়। ফের নতুন উদ্যম নিয়ে শুরু করেন আর পরের মৌসুমে করেন সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে করেন ৫৮ গোল।
নতুন অধ্যায়ে মেসির দুর্দান্ত ফর্মের কারণেই নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রেবল (চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা, কোপা দেল রে) জেতার স্বাদ পায় বার্সেলোনা।
চলতি মৌসুমেও সেরা ফর্মে আছেন মেসি। এরইমধ্যে লা লিগায় ২৭ ম্যাচে তার গোল ৩৩টি। এছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগেও ১০ গোল নিয়ে আছেন তালিকার শীর্ষে। বার্সাও ছুটছে দুরন্ত গতিতে। এবারও তাদের সামনে ট্রেবল জয়ের হাতছানি।