ওয়াইসি ঠেকাতে ফুরফুরা দরবারে ভারতের কংগ্রেস নেতারা

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য কংগ্রেসের দুই শীর্ষনেতা ফুরফুরা দরবারে হাজির হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে হুগলির ফুরফুরা পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ওই বৈঠকে তার সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকেও। বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য কংগ্রেসের দুই শীর্ষনেতার এই ফুরফুরা অভিযান নিঃসন্দেহে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
এদিকে একই দিন প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে বিধানসভা ভোটের জোট নিয়ে বামদের সঙ্গে কংগ্রেসের বৈঠক হওয়ার কথা। কংগ্রেস-বাম জোটের প্রাথমিক আলোচনা ওই বৈঠক থেকেই শুরু হবে। সেই বৈঠকেও অধীরের সঙ্গে মান্নানের থাকার কথা। থাকার কথা প্রদেশ কংগ্রেসের আরও কয়েকজন নেতার।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, তার আগে ত্বহার সঙ্গে কথা বলে রাজ্যে মুসলিম ভোটের বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে চাইছেন কংগ্রেস নেতা অধীর।
কংগ্রেসের সমর্থন মুসলিম সমাজে কেন কমছে?
সাম্প্রতিক সময়ে বাবরি মসজিদ ইস্যুতে মুসলমানদের পক্ষে কথা না বলায় ভারতের মুসলিমদের একাংশ কংগ্রেসের থেকে দূরে সরে গিয়েছেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। এর কারণে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির ‘মিম’ বিধানসভা ভোটে মালদহ-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রার্থী দিতে চলেছে বলে খবর। তা নিয়েও কংগ্রেসের মধ্যে খানিক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
অথচ এর আগে ঐতিহাসিকভাবে সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও মুসলিমরা মূলত কংগ্রেসের সঙ্গেই থেকেছেন। কিন্তু পরপর কয়েকটি ভোটে দেখা গিয়েছে, কংগ্রেসের সেই ভোটে ভাগ বসিয়েছে তৃণমূল। পাশাপাশিই এবার ওয়াইসি আসরে নামার কথা বলায় মুসলিম ভোটব্যাংক আরও বিভক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে যা কংগ্রেসের পক্ষে বাড়তি চিন্তার কারণ।
ওয়াইসির উত্থানে কংগ্রেসে আতংক
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের হায়দ্রাবাদ-ভিত্তিক রাজনৈতিক দল এআইএমআইএম বিহারের নির্বাচনে অভাবিত সাফল্য পাওয়ার পর কংগ্রেস শিবিরে চিন্তার ভাজ পড়ে। কংগ্রেসের নেতারা সরাসরি বলছেন, ওয়াইসির দল মুসলিম ভোট কেটেছে বলেই বিজেপি জোট বিহারে আবার ক্ষমতায় আসতে পারল। আসাদউদ্দিন ওয়াইসি অবশ্য গণমাধ্যমের কাছে জোরালোভাবে বলেছেন, ভারতীয় মুসলিমরা তাকে বিজেপির ‘উপযুক্ত জবাব’ হিসেবে দেখছেন বলেই বিভিন্ন রাজ্যে বেছে নিচ্ছেন।
মহারাষ্ট্র ও বিহারের পর তার পরবর্তী নিশানা যে পশ্চিমবঙ্গ, সেটাও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
যে কারণে ওয়াইসির জনপ্রিয়তা বাড়ছে
বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিন তালাক রদ করার বিরোধিতা থেকে শুরু করে বাবরি মসজিদ ভাঙার ইস্যু বা নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ওয়াইসি যেভাবে সরব হয়েছেন, তাতে ভারতীয় মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশ তাকে সেদেশে মুসলিমদের নতুন নেতার ভূমিকায় দেখতে শুরু করছেন।
বস্তুত প্রায় ৯৩ বছরের পুরনো রাজনৈতিক দল মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের প্রভাব মাত্র বছর কয়েক আগেও হায়দ্রাবাদ শহরের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
রাজ্যে বিজেপির উত্থানের পর মুসলিম ভোট আরও বেশি করে অ-বিজেপি শক্তির কাছে আসবে, সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু সেই ভোট যে পুরোপুরি কংগ্রেসের বাক্সে পড়বে, তারও কোনও নিশ্চয়তা কংগ্রেসের নেতারা দেখতে পাচ্ছেন না। সেই কারণেই মুসলিম ভোট নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে বাড়তি তৎপরতা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস নেতাদের ফুরফুরা সফর সেই কারণেই বলে প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রের খবর।
আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়েও চিন্তিত কংগ্রেস
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, ফুরফুরা পীরজাদা ত্বহার ভাইপো আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়েও চিন্তিত কংগ্রেস নেতারা। ইতিমধ্যেই তিনি কলকাতার লাগোয়া দুই জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়ায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা শুরু করেছেন। সেই বিষয়েও কংগ্রেসের মুসলিম নেতারাও কিছুটা চিন্তিত। আব্বাসের বিষয়েও ত্বহার সঙ্গে কংগ্রেসের দুই শীর্ষনেতার কথা হতে পারে। তবে ইতিহাস বলছে, সব দলের নেতারাই ত্বহার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেন। কংগ্রেসের দুই শীর্ষনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য দলের নেতারাও তার সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই দেখা করবেন।