টানা তিন যুগ ধরে বন্ধ আছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। চালুর বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ আজ নেওয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে অর্ধশতাধিক গ্রামের গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্করা স্বাস্থ্যসেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আর বাড়ছে হাতুড়ে ডাক্তার ও কবিরাজের জমজমাট ব্যবসা। ফলে সবার মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রায় তিন যুগ ধরে বন্ধ থাকায় এমনি দৃশ্য দেখা গেছে হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাঠাবুকা গ্রামে অবস্থিত দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি।
জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পাঠাবুকা, লামাগাও, সোলেমানপুর, ভবনীপুরসহ ৫০টি গ্রাম টাঙ্গুয়ার হাওর, মহালিয়া, কানামুইয়া, গুরমাসহ বেশ কয়েকটি হাওর দ্বারা বেষ্টিত। গ্রামগুলোর চারপাশ বছরের ছয়মাস গভীর পানিতে নিমজ্জিত থাকে। বর্ষায় লোকজনের যাতায়াত মাধ্যম নৌকা আর হেমন্তে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বা পায়ে হাটা পথ। উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ওই সব গ্রামের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে ইউনিয়নবাসীকে উপজেলা সদরে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা অথবা ধর্মপাশা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে হয়।
উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পাঠাবুকা গ্রামের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি পাঠাবুকা গ্রামসহ আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের সকল বয়সের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবেই চালু করা হয় ১৯৬০ সালের দিকে। ১৯৮৪ সালে ও ১৯৮৮ সালে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপজেলার পাঠাবুকা গ্রামে অবস্থিত দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। এরপর থেকেই কেন্দ্রটির কার্যক্রম বন্ধ আছে। এরপর থেকে আজও পর্যন্ত সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়নি। চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় যাতায়াতে দুর্গম এই ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের ৪০ হাজার লোকজন স্বাস্থ্যসেবা পেতে গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্করা স্বাস্থ্যসেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
পাঠাবুকা গ্রামের আইনাল হক, রুকন মিয়া, মোব্বাশিরসহ অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষোভের সাথে বলেন, এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছে না তারা। ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ অসচেতন ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাই বেশিরভাগ মানুষ রোগবালাই নিরাময়ে কবিরাজের দ্বারস্থ হন। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বেশী। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি চালু করতে আবেদন করেছি বার বার কিন্তু কোনও লাভ আজ পর্যন্ত হয় নি।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হক জানান, পাঠাবুকা পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি রয়েছে। বন্ধ থাকায় সবাই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করার জন্য নতুন ভবন নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আগামী অর্থ বছরের টেন্ডার হয়ে যাবে। (খবর সংবাদদাতার)