বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
বড়লেখায় ৬ বছর ধরে মামলা মোকদ্দমার বেড়াজালে আটকিয়ে হাকালুকির গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালের কয়েক কোটি টাকার মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে। সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবী সমিতির সম্পাদক সাহাব উদ্দিন অভিযোগ করেন এক প্রভাবশালীর মদদপুষ্ট মৎস্যজীবী সমিতি সম্প্রতি আদালতের স্থিতাবস্থা ভঙ্গ, সরকারী কৌসুলী ও জেলা-উপজেলা জলমহাল কমিটির মতামত উপেক্ষা করে বেআইনীভাবে এ জলমহালের রাজস্বাদি পরিশোধ করেছে।
জানা গেছে, হাকালুকির গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালটি ১৪২২ বাংলা হতে ১৪২৭ বাংলা পর্যন্ত বন্দোবস্ত নিতে ৪টি মৎস্যজীবী সমিতি আবেদন করে। ২০ একরের ঊর্ধ্বের জলমহাল ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বোচ্চ দরদাতাদের লীজ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। ২০১৪ সালে তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রীর সুপারিশে ভূমি মন্ত্রণালয় সর্বনিম্ন দরদাতা পানকৌড়ি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে সর্বোচ্চ দরদাতা বানিয়ে ইজারা দেয়ায় ঘটে বিপত্তি। সর্বোচ্চ দরদাতা সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি মহামান্য হাইকোর্টে রীট মামলা দায়ের করে (মামলা নং-৮০৩৪/২০১৫)। মহামান্য হাইকোর্ট পানকৌড়ি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির বেআইনী লীজ বাতিলের রায় দেন। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে পানকৌড়ি মৎস্যজীবী সমিতি ‘লীভটু আপীল’ করে (নং-৩৬১৬/২০১৫)। আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আদেশ প্রদান করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে পানকৌড়ি পুনরায় রিভিউ করে। রিভিউ মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সোনারবাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবী সমিতি রিভিউর বিপক্ষে হাইকোর্টে কনডেম মামলা করেন যা চলমান। এ অবস্থায় মাধবকুন্ড মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ১৪২৪ বাংলা হতে ১৪২৯ বাংলা পর্যন্ত ইজারা বন্দোবস্তের আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে ১১ অক্টোবর উপজেলা ও জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহাল মামলাভুক্ত থাকায় মাধবকুন্ড সমিতিকে ইজারা দেয়ার সুযোগ নেই মর্মে ভূমি মন্ত্রণালয়ে মতামত প্রেরণ করেন। কিন্তু মাধবকুন্ড মৎস্যজীবী সমিতির অর্থের যোগানদাতা ফেঞ্চুগঞ্জের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধি ভূমি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের যোগসাজশে তড়িঘড়ি গত ১৪ অক্টোবর আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে বেআইনিভাবে গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালের উপর সরকারের কোষাগারে ১ কোটির অধিক টাকার রাজস্বাদি পরিশোধ করেন। অথচ সরকারী কৌসুলী ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে মতামত দেন এ জলমহাল নিয়ে বিভিন্ন মামলা চলমান। এগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৪২৭ বাংলার সরকারী ইজারামূল্য ও অন্যান্য করাদি আদায় করা যাবে না।
সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবী সমিতির সম্পাদক সাহাব উদ্দিন জানান, তার সমিতি জলমহালটির বৈধ ইজারাদার। উপজেলা ও জেলা জলমহাল কমিটি ও সরকারী কৌসুলীর মতামত উপেক্ষা করে মামলাধীন অবস্থায় মাধবকুন্ড মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অর্থের যোগনদাতা প্রভাবশালী নুরুল ইসলাম আদালত অবমাননা করে উক্ত জলমহালের ১৪২৭ বাংলা সনের রাজস্বাদি পরিশোধ করেছেন। প্রায় ৬ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার বেড়াজালে আটকিয়ে হাকালুকির সর্ববৃহৎ এ জলমহাল থেকে কয়েক কোটি টাকার মাছ লুট করছেন। ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় আমরা আদালতের পানে চেয়ে আছি।
এ ব্যাপারে মাধবকুন্ড মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সালাম উদ্দিন জানান, তার সমিতি গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালের ইজারা পেয়েছে। মামলা-মোকদ্দমা আছে কি না জানেন না। ফেঞ্চুগঞ্জের নুরুল ইসলাম ও ভোলারকান্দির মোক্তার আলী সমিতির পক্ষে জলমহালের ১৪২৭ বাংলা সনের সমুদয় রাজস্বাদি পরিশোধ করেছেন।
জেলা প্রশাসক মো. মীর নাহিদ আহসান জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ফাইল না দেখে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন না। ফাইল দেখে বিষয়টির খোঁজ নিবেন।