তিন বন্দরে ভারতীয় পেঁয়াজ নিয়ে ঢুকল অর্ধশতাধিক ট্রাক

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পচন ধরার আশঙ্কায় টানা পাঁচ দিন পর আগের এলসি করা পেঁয়াজ ছাড় করতে শুরু করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। শনিবার দুপুর থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ঢুকেছে ভারতীয় পেঁয়াজবোঝাই অর্ধশতাধিক ট্রাক। তবে, দীর্ঘদিন আটকে থাকায় ভ্যাপসা গরম ও বৃষ্টিতে এসব পেঁয়াজের অধিকাংশই নষ্ট হয়েছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।
তবে, এলসি করা পেঁয়াজের শত শত ট্রাক আটকা পড়লেও সব আমদানির অনুমতি দেয়নি ভারত সরকার। ১৪ সেপ্টেস্বর পর্যন্ত এলসির বিপরীতে যে সব টেন্ডার পাস হয়েছে শুধু সেসব পেঁয়াজ ছাড় হচ্ছে। ভারতীয় সিএন্ডএফ সূত্রে জানা গেছে, শর্তসাপেক্ষে ২৫ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে আটকে থাকা পেঁয়াজবোঝাই ট্রাককে বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য শুল্ক বিভাগকে এ নির্দেশ দেয় ভারত সরকার।
হিলি বন্দর সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকাল সোয়া তিনটায় প্রথমে পেঁয়াজবোঝাই তিনটি ট্রাক প্রবেশ করে বাংলাদেশে। পরে পর্যায়ক্রমে আরও ৮টি। হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি শাহিনুর রেজা শাহীন বলেন, ভারতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর এলসি করা যে সমস্ত পেঁয়াজের ট্রাক ওপারে আটকা পড়েছিল, তা বাংলাদেশে পাঠানো শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঠিয়েছে ১১ ট্রাক পেঁয়াজ। যা আনুমানিক ২৫০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে শনিবার দুপুর ১টা থেকে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দর থেকে সাতক্ষীরা ভোমড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৪টি পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক। এ বন্দরে এখনো আমদানিমুখী কয়েকশো ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ আটকা আছে।
অপরদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আজ বেলা ১১টা থেকে বিকাল পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজবাহী আটটি ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সোনামসজিদ বন্দর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মাইনুল ইসলাম বলেন, ট্রাকগুলোতে ২১৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রয়েছে। আজ আর পেঁয়াজবাহী ট্রাক আসার সম্ভাবনা নেই। তবে পেঁয়াজের একটা অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ভারতের ওপারে মোহদীপুর স্থলবন্দরে আটকে পড়ে পেঁয়াজের গাড়িগুলো পরবর্তী এলসিতে আসার অপেক্ষায় আছে।
অভ্যন্তরীণ দাম বাড়ার অজুহাত দিয়ে গত সোমবার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে ভারত। ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ২৫০ থেকে ৩০০ ডলারে রপ্তানি করছিলেন। কিন্তু, ভারতে পেঁয়াজের মূল্য দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাওয়ায় তারা বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ৭৫০ ডলার নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব করেন। তারা পুরনো এলসির পেঁয়াজকেও এর আওতায় ধরেন। এতে সীমান্ত বন্দরগুলোতে আটক পড়ে পুরনো এলসি করা শত শত ট্রাক পেঁয়াজ। এরমধ্যে হিলি বন্দরের আমদানিকারকরাই ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এলসি করেছিলেন।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, এ নিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বৈঠক হয়। পরে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার সন্ধ্যায় আটকে থাকা পেঁয়াজের গাড়ি ছাড় করতে সে দেশের কাস্টমসকে লিখিত চিঠি দেয়। এরপর আজ বিকাল থেকে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
শনিবার হিলি স্থল বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজের গাড়ির সামনে আমদানিকারকরা দাঁড়িয়ে আছেন। ক্রেতার সংখ্যাও কম। অনেকে পেঁয়াজ পোর্টে বিক্রি না করে নিজস্ব গোডাউনে আনছেন। আমদানিকারকরা বলছেন, নিজস্ব গোডাউনে আনলোড করে বাছাই প্রক্রিয়া শেষে বাজার দর হিসেবে তারা পেঁয়াজ বিক্রি করবেন। এরমধ্যেই ভারত থেকে পেঁয়াজ ছাড়ের খবরে স্থানীয় খুচরা বাজারে কেজিতে ২০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম।
হিলি পানামা পোর্ট জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাপ মল্লিক বলেন, গেলো সোমবার কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। পেঁয়াজগুলোর গুনগত মান নষ্ট হয়েছে। দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে বন্দরে আসা পেঁয়াজ দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা করছি। যাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
এদিকে ভোমড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এ বন্দর দিয়ে পাঁচ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। ভোমরা সিএণ্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাছিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ইণ্ডিয়ান গর্ভমেন্ট একটা ডিজিএফটি চিঠির মাধ্যমে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়ান ও বাংলাদেশি ব্যবসায়িদের যৌথ প্রচেষ্টায় শুধুমাত্র ১৪ তারিখ পর্যন্ত যে সমস্ত গাড়ির লিও বা ফাইনাল ডকুমেন্টস তৈরি করা ছিল শুধুমাত্র সেই গাড়িগুলোর প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। আমরা ইন্ডিয়ান ব্যবসায়ী ও কাস্টসমদের মাধ্যমে ব্যাপারটা জানতে পারি। সেক্ষেত্রে আমাদের ৩৫ থেকে ৪০টি গাড়ি লিও করা আছে। সেই গুড়িগুলো হয়তো ঢুকবে। আবার অনেক গাড়ি ফিরেও গেছে। কিছু গাড়ি গোডাউনে আনলোড করেছে। আশা করছি ৪০টির মতো গাড়ি ঢুকবে।
তিনি আরও বলেন, গরমে ১৪ তারিখ থেকে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকগুলোর ৫০ শতাংশ পেঁয়াজ খাওয়ার অনুপোযোগী। যে গাড়িগুলো ঢুকবে ওই গাড়িগুলো ঢাকা চট্টগ্রামে যাওয়ার উপযোগী নয়। ভোমরায় নামিয়ে বাতাসে পেঁয়াজ ঠাণ্ডা করে শর্টিং করার পর পরিস্থিতি বুঝে তবে বাইরে পাঠাতে হবে।