মধ্য ডিসেম্বর থেকে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। গ্রামাঞ্চলে শীতের কামড় থেকে বাঁচার একটি সাধারণ উপায় দেখা যায় আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহানো। আর তা করতে গিয়েই প্রতিবছর বহু মানুষ দগ্ধ হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত এক মাসে আগুনে পোড়া ২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে এবং মারা গেছে একজন। শুধু রংপুরে নয়, সারা দেশেই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি বেশির ভাগ রোগীই শীতজনিত কারণে আগুনে পোড়া। এর মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যা বেশি। জানা যায়, ইনস্টিটিউটের ৫০০ শয্যার মধ্যে বর্তমানে একটিও খালি নেই। অথচ প্রতিদিন গড়ে ৬০ জন আগুনে পোড়া রোগী আসে জরুরি বিভাগে, আর ২৩০ থেকে ২৫০ রোগী আসে বহির্বিভাগে। খুবই সংকটাপন্ন ১০-১২ জনকে ভর্তি করা হয়, বাকিরা অপেক্ষায় থাকে। প্রায় একই অবস্থা অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও।
দেশের তিনটি জেলায় এখনো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। জেলাগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও সিলেট। আরো পাঁচটি জেলার তাপমাত্রা শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলমান থাকতে পারে। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অত্যধিক শীতে শুধু যে আগুনে পোড়া রোগী বাড়ছে তা-ই নয়, কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই রোগীদের অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। সেই অবস্থায় আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকায় রীতিমতো চিকিৎসার সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক রোগীর জন্য আইসিইউসেবা জরুরি হলেও তা দেওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীর অনুপাতে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের যথাযথ সেবাও দেওয়া যাচ্ছে না।
শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকেরই থাকার ভালো ঘর নেই। ভাঙা বেড়ার ঘরে কনকনে ঠা-া বাতাস হু হু করে ঢুকতে থাকে। লেপ-কম্বল বা মোটা শীতনিবারক বস্ত্রেরও অভাব রয়েছে। তা ছাড়া গ্রামের দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের শরীরে রয়েছে রক্ত স্বল্পতা ও পুষ্টির অভাব। শীতে তারা সহজেই কাবু হয়ে পড়ে। তারাই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা বেশি করে আর দুর্ঘটনার শিকার হয়। আগুনে পোড়া রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বড় শহরের আধুনিক হাসপাতালে নেওয়ার মতো আর্থিক সংগতিও তাদের নেই। তাদের রক্ষায় দ্রুত গরম জামা-কাপড়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি উন্নত ঘরদোর তৈরিতে দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করার দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনাও নিতে হবে। শহরের ভাসমান মানুষের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। হাসপাতালগুলোতে, বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। শুধু আগুনে পোড়া নয়, শীতকালে যেসব স্বাস্থ্যসমস্যা তীব্র হয়, সেগুলো মোকাবেলায়ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।