সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের বিস্তৃত হাওর এলাকায় হাওর এলাকায় ১৯০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
হাওরে ঘেরা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলা। পাশাপাশি জেলা হলেও তাদের মধ্যে নেই সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুধু তা-ই নয়, বর্ষায় হাওর যখন প্রাণ পায়, তখন সুনামগঞ্জের এক উপজেলার সঙ্গে আরেক উপজেলাও হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। সড়ক না থাকায় প্রসূতিসহ নানা রোগব্যাধিতে মেলে না মানুষের জরুরি চিকিৎসাসেবা। শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয় সড়কের অভাবে।
এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকারি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘হাওর এলাকায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প : সুনামগঞ্জ জেলা (দিরাই, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর উপজেলা)’ নামে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। এতে সুনামগঞ্জে বর্ষার সময়ও জেলার প্রতিটি উপজেলার সঙ্গে যেমন সংযোগ স্থাপন সম্ভব হবে, তেমনি নেত্রকোনার সঙ্গেও সুনামগঞ্জের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় হাওর এলাকায় ১৯০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে অল সিজন সড়ক (বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা সড়ক, যা সব মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে) ১২৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার, সাবমারজিবল সড়ক (বর্ষায় তলিয়ে যাবে) ৫১ দশমিক ০৭ কিলোমিটার এবং উড়াল সড়ক (যার নিচ দিয়ে পানি চলাচল করতে পারবে) ১৩ দশমিক ৪১ কিলোমিটার।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে হাওরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অল সিজন ও সাবমারজিবল সড়ক নির্মাণ করলে হাওরের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। হাওরের ইকো-সিস্টেম বাধাগ্রস্ত হবে। এরকম জলাশয় পৃথিবীতে বিরল। তাই পানি প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য উড়াল সড়ক করতে হবে হাওরে। ব্যয়বহুল হলেও উড়াল সড়কই হাওরের জন্য উপযুক্ত।
তাছাড়া অল সজিন ও সাবমারজিবলের তুলনায় উড়াল সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক কম। হাওরে উড়াল সড়ক করলে যেমন যোগাযোগ স্থাপন সহজ হবে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে, তেমনি হাওরও রক্ষা পাবে। ফলে অল সিজন ও সাবমারজিবলের পরিবর্তে হাওরের রাস্তা উড়ালের পক্ষে মত দেন তারা।
সরকার সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, হাওরের পানিপ্রবাহ ও বাস্তুসংস্থান ঠিক রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় উড়াল সড়কের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, ১৯০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে উপজেলা অল সিজন সড়ক ১০৬ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার, উপজেলা সাবমারজিবল সড়ক ২৮ দশমিক ২১ কিলোমিটার, ইউনিয়ন অল সিজন সড়ক ১৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সাবমারজিবল সড়ক ১৪ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার, গ্রাম সাবমারজিবল সড়ক ৮ দশমিক ১৭ কিলোমিটার এবং উপজেলা এলিভেটেড (উড়াল) সড়ক ১৩ দশমিক ৪১ কিলোমিটার। পাশাপাশি উপজেলা সড়কে ২ হাজার ৯৮৭ মিটার ব্রিজ, ইউনিয়ন সড়কে ৬৮৫ মিটার ব্রিজ, উপজেলা সড়কে ৬৬৭ মিটার কালভার্ট, ইউনিয়ন সড়কে ৭৫ মিটার কালভার্ট এবং গ্রাম সড়কে ৩৩ মিটার কালভার্ট নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপপ্রধান মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘প্রকল্পটা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এখন যা আছে, তা থেকে অনেক কিছু বাদ যাবে। অনেক সংক্ষিপ্ত হয়ে যাবে প্রকল্পটি। প্রায় ৩৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প পেশ করা হয়। সেটি ১৫০০ কোটি টাকায় নেমে আসতে পারে। তবে এখনও কিছু চূড়ান্ত নয়। এর রাস্তা অনেক কমে যেতে পারে। বাঁধ দিলে হাওরের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। পানির প্রাবহ ঠিক রাখা, জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য উড়াল সড়ক প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৩ কিলোমিটার উড়াল সড়কের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেটাও হয়তো কমে আসবে কিছুটা।’