বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল সংকটে পড়তে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনায় এ আশঙ্কা প্রবল হয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে অবতরণকারী বাংলাদেশি যাত্রীদের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের আকাশপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি দেশে বাংলাদেশি যাত্রীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইতালিতে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা জারির শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে দেশে এসে আটকা পড়া লক্ষাধিক মানুষ কয়েক গুণ বেশি দামে টিকিট কিনেও সময়মতো গন্তব্যে যেতে পারবে কি না সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি বলেছেন, সরকারি সংস্থাগুলোর করোনা বিষয়ে খুবই সতর্ক হওয়া দরকার ছিল; কিন্তু হয়নি। তারা সতর্ক না থাকলে বাংলাদেশ এমন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তেই থাকবে। দু-একজনের জন্য অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের গন্তব্য আরো সংকুচিত হবে। টিকিট নিয়ে একটা সংকটও চলছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে এক লাখ শ্রমিক এসেছিলেন। তাঁরা ফিরে যেতে পারছেন না। ইউরোপ-আমেরিকায় যেতে চান এমন ১৮ হাজার যাত্রী টিকিটের সন্ধান করছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৫ হাজার যাত্রীও অপেক্ষায় আছেন। নিষেধাজ্ঞার আওতা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ মহাবিপদে পড়বে।
বাংলাদেশি যাত্রীদের অনেকে করোনা পরীক্ষা করে ফ্লাইটে উঠছেন না। অনেকের ওই সব দেশে গিয়ে করোনা পজিটিভ হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্বের কোনো বিমানবন্দর বলেনি বাংলাদেশি যাত্রীদের করোনা সনদ নিয়ে যেতে হবে। তার পরও মন্ত্রণালয় যাত্রীদের উদ্দেশে বলেছে, তাঁরা যেন করোনা পরীক্ষা করে যান এবং ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে যে করোনা পরীক্ষার নামে জালিয়াতি চলে, তা বিদেশি বিমানবন্দরে গিয়ে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ইতালির বিমানবন্দরে অনেকেই পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, অথচ তাঁরা এ দেশ থেকে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে গেছেন। এটা আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশিদের ওপর আস্থাহীনতাই ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার কারণ।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে সতর্ক-সাবধান হতে হবে। করোনার বানোয়াট সনদ যে দেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে, সেটা এখন স্পষ্ট। স্বাস্থ্য পরীক্ষা যথাযথভাবে করা যে কত জরুরি তা-ও এখন বোঝা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সতর্ক ও কঠোর না হলে অনেক বড় খেসারত আমাদের দিতে হবে।