করোনা ভাইরাসের জন্য লকডাউন তুলে নেয়ার সাথে সাথে দেশের শহর বন্দর স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু হওয়ায় সাথে পরিবহন ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বলে অনেকে ভাবছেন।
রবিবার থেকে খুলছে রাজধানীসহ দেশের সব বিপণিবিতান ও দোকানপাট। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক লেনদেন সময়ে ফিরছে। আজ থেকে সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে গণপরিবহন, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল। টানা প্রায় দুই মাস যাত্রীবাহী পরিবহনের চাকা বন্ধ ছিল। লঞ্চ ও ট্রেন চলছে রবিবার থেকে। আর বাস চলবে আজ সোমবার থেকে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে তিন পরিবহনেই অর্ধেক যাত্রী তোলা হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন বাড়ছে, তখনই বাতিল করা হয়েছে সাধারণ ছুটি। আর আগে দুই মাসের বেশি সময়ের সাধারণ ছুটিতেও দেখা গেছে মানুষ ছুটির শর্ত মানেনি। ঈদে বাড়ি চলে যাওয়া, বাড়ি থেকে ফিরে আসাসহ ঈদ শপিংও করতে দেখা গেছে অনেককে। শর্ত সাপেক্ষে ঈদের আগে কিছু মার্কেট খোলার পর আবার শর্তভঙ্গের অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস এমনই এক ভয়াবহ সংক্রামক রোগ, যা জ্যামিতিক হারে বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই শুধু এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। কিন্তু এই নিয়ম মানার ক্ষেত্রে আমরা কতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছি বা দিয়েছি, সেটাই হচ্ছে মূল কথা। এরই মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই অবস্থায় সাধারণ ছুটি বাতিল করে গণপরিবহন চালুর পর কী হবে? বিপণিবিতান, অফিস-আদালতে সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা গেলেও যেতে পারে। কিন্তু গণপরিবহনে? পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরাও নিশ্চয়ই মানতে বাধ্য হবেন যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনা করাই বড় চ্যালেঞ্জ। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন করার পরও সরকার সড়কে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। পরিবহন খাতের শীর্ষ নেতাদের বড় অংশই সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাধা তৈরি করে আসছে। স্বাভাবিক সময়েই অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করে শ্রমিকরা মালিককে নির্ধারিত আয় তুলে দেন। এ অবস্থায় রাস্তায় বাস নামালে তাঁরা যে অতিরিক্ত যাত্রী তুলবেন না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? আবার এটাও তো ঠিক যে লাখ লাখ শ্রমিক ও মালিকের জীবনের সঙ্গে পরিবহনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। সামান্য ভুল বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। কাজেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদেরই ঠিক করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে যাত্রীসেবা দেওয়া যায়। একই সঙ্গে ভাবতে হবে গণপরিবহনে যুক্ত যানবাহনগুলো জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টিও। এই যানবাহনগুলোর বেশির ভাগই দুই মাস খোলা রাস্তায় পড়ে ছিল।
স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলবে গণপরিবহন, আর এই গণপরিবহন যেন করোনাভাইরাসের বাহক হবে না এটাই আমাদের প্রত্যাশা।