কভিড-১৯ মহামারিতে পাল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির সব হিসাব। পণ্য রপ্তানিতে ধস নামার পাশাপাশি আমদানিও নেমেছে তলানিতে। আশাব্যঞ্জক নয় রেমিট্যান্স। এ অবস্থায় বাজেট আসছে। এবারের বাজেট প্রণয়নে নীতিনির্ধারকদের সামনে রয়েছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি বাড়ছে। ঘাটতি মেটাতে দাতাদের কাছে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ সহায়তা চাইছে সরকার। অন্যদিকে ঘাটতি মেটাতে সরকারের সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর-রাজস্ব। সরকার কর-রাজস্ব হিসাবে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়ার কথা, সেখানে তাঁরাই এখন সরকারের কাছে সহায়তার জন্য হাত পাতছেন। এর ফলে বর্তমানে যেমন কর চাওয়ার উপায় নেই, অন্যদিকে করমুক্তির আবেদনও আসছে এনবিআরে। শীর্ষ করদাতা প্রতিষ্ঠান, শীর্ষ ব্যক্তি করদাতাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অনেকেই না আছেন করোনাকালে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে, না আছেন রাজস্ব দিয়ে সরকারের পাশে। এ অবস্থায় রাজস্ব আয়ের নেতিবাচক প্রভাব দিনে দিনে চরম অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে। করোনার কারণে সরকারের অপ্রত্যাশিত খরচ অনেক বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় অসহায় মানুষের পেছনেও বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দেশি শীর্ষ কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগ বন্ধ থাকায় বলতে গেলে ভ্যাট আদায় অনেকখানি কমে গেছে। ওদিকে আগামী দুই মাসের জন্য সব ঋণের কিস্তি স্থগিত করা হয়েছে। সুদও নেওয়া যাবে না। ব্যাংকের মূল ব্যবসাই ঋণ থেকে আয়। এটা এখন হচ্ছে না। রপ্তানি আয় তলানিতে। রপ্তানি বাণিজ্য থেকে ব্যাংকের আয় ছিল, সেটাও কম। রেমিট্যান্স কমছে। ফলে ব্যাংকের কমিশন বাবদ যে আয়, সেটাও কমছে।
সব মিলিয়ে পুরো রাজস্ব পরিস্থিতি নেতিবাচক। আমদানিকারকরা আমদানি কমানোয় কমছে শুল্ক; উৎপাদন ও বিপণন ব্যাহত হওয়ায় কমছে ভ্যাট। আর সব মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কমছে আয়কর আদায়ও। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা ও বিত্তবানদের অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এতে কিছু প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও বেশির ভাগের সাড়া মেলেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক-কর সুবিধা নিয়ে বহু প্রতিষ্ঠান মোটাতাজা হয়েছে। সময় সময় কর ফাঁকিও দিয়েছে। এই দুর্দিনে তাদের দেখা মেলা ভার। উল্টো রাজস্ব সুবিধা চায়। এটা গণহারে মানা ঠিক হবে না। এদের মধ্যে যারা সৎ করদাতা, তাদের ছাড় দেওয়া যেতে পারে। আর যারা করও ফাঁকি দিয়েছে, এখন দুর্দিনে সাড়াও দেয় না, তাদের ধরা উচিত।
আমরা আশা করব, রাজস্ব আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠোর হবে।