মহিমান্বিত ক্বদর

20

মুফতি মুহাম্মাদ আকতার আল-হুসাইন

রাহমাত, বারাকাত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাহিনা পবিত্র মাহে রামাদ্বান হচ্ছে গুনাহগার বান্দাদের গুনাহ মাফ করানোর অন্যতম একটি হাতিয়ার। এই মাসকে আল¬াহ তায়ালা মুমিন মুসলমানদের জন্য একটা বড় নিয়ামত হিসেবে উপহার দিয়েছেন। আর এ মাসে আমাদের গুনাহগুলো মাফ করানোর অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে মহিমান্বিত ক্বদর। এই ক্বদর সম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল¬াহ তায়ালা একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাই নাযিল করেছেন। তাই আজ আমরা কুরআন-হাদিসের আলোকে সেই মহিমান্বিত ক্বদর কি, সেটার ফজিলত, সেটা কখন ও আমাদের করণীয় কি সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব ইনশা আল¬াহ। —-ক্বদর কি? কুরআনুল কারীমের মধ্যে এই রজনীকে বলা হয়েছে “লাইলাতুল ক্বাদরী” এখানে লাইলাতুন অর্থ রজনী আর ক্বদর অর্থ সম্মান, মর্যাদা ও মহিমান্বিত। সুতরাং “লাইলাতুল ক্বাদরী” এর একত্রে অর্থ হচ্ছে সম্মানী রাত, মর্যাদার রাত ও মহিমান্বিত রাত।—–ক্বদরের ফজিলত। এই মহিমান্বিত রজনীর অনেক ফজিলত রয়েছে। যেটা কুরআনুল কারীমের সূরা ক্বদরের মধ্যে আল¬াহ তায়ালা নিজেই বর্ণনা করেছেন। এবং রাসূলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর মোবারক জবানে বলে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল¬াহ তায়ালা বলেছেন- “নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআনুল কারীম) অবতীর্ণ করেছি ক্বদর রজনীতে। আর ক্বদরের রজনী সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? ক্বদরের রজনী হচ্ছে হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রজনীতে ফেরেশতারা ও রূহ (হযরত জীব্রাঈল) অবতীর্ণ হন প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের বিশেষ অনুমতিক্রমে। শান্তিই বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত”। আল¬াহ তায়ালা ক্বদর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ করে জানিয়ে দিলেন এই ক্বদরেই পবিত্র কুরআনুল কারীম অবতীর্ণের সূচনা হয়েছে। যা মানবজাতির জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নির্দেশক। এই ক্বদরের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। অর্থাৎ লায়লাতুল ক্বাদর যাবতীয় সময়কালের চেয়ে উত্তম যাতে লায়লাতুল ক্বাদর নেই। আরবরা “আলফুন” হাজার শব্দ ব্যবহার করে থাকে কোন বস্তুর চূড়ান্তসীমা বুঝানোর জন্য। যেমন সূরা বাকারাহ এর ৯৬ নম্বর আয়াতে আল¬াহ তায়ালা ইহুদীদের চরিত্র সম্পর্কে বলেছেন “তাদের কেউ কামনা করে যেন হাজার বছর জীবন পায়”। এখানে হাজার বছর অর্থ চিরকাল। একইভাবে “আলফি সানাতীন” বা হাজার বছর অর্থ অনন্তকাল বুঝায়। (তাফসীরে কুরতুবী)। সুতরাং এখানে এক হাজার মাসের নয়, বরং এ রজনীর ইবাদত ও নেক আমল হাজার হাজার রজনীর ইবাদতের তুলনায় উত্তম। আল¬াহ তায়ালা এখানে পরপর তিনবার “লাইলাতুল ক্বাদর” উলে¬খ করার পর বলেছেন এটি হাজার রজনীর চেয়ে উত্তম। বারবার বলার মাধ্যমে এ রজনীর মর্যাদা আরও উন্নীত হয়েছে। এ রজনীর ফজিলত বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম বলেছেন- যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করবে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রামাদ্বানের রোজা পালন করবে, তারও অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করা হবে”। অর্থাৎ ইবাদত হতে হবে আল¬াহর সন্তুষ্টি লাভের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এবং তাঁর নিকট থেকে ছাওয়াব ও পুরস্কার লাভের আকুল আকাংখা নিয়ে। এখানে সকল গুনাহ বলতে সকল ছগীরা অর্থাৎ ছোট গুনাহ বুঝানো হয়েছে। কেননা কবীরাহ বা বড় গুনাহ তাওবা ব্যতীত মাফ হয় না। যেমন সূরা নাজমের ৩২ নম্বর আয়াতে আল¬াহ তায়ালা বলেছেন- “যারা কবীরাহ গুনাহ ও অশ¬ীল কর্মসমূহ হতে বিরত থাকে, তবে ছোটখাট গোনাহ ব্যতীত। নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তা প্রশস্ত ক্ষমার অধিকারী”। মুসলিম শরীফের হাদিসের মধ্যে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম বলেছেন- পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমাহ থেকে আরেক জুমাহ এবং এক রামাদ্বান থেকে আরেক রামাদ্বান, তার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য গুনাহের কাফফারাহ হয়ে যাবে যদি কবীরাহ গুনাহ হতে বেঁচে থাকে”। রামাদ্বানের আগমনে রাসুলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম সাহাবায়ে কেরামদের উদ্দেশ্য করে ভাষন দিতেন। যেমন সুনানে আন-নাসাঈতে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম বলেছেন- যে, তোমাদের নিকট রামাদ্বান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বারাকাতময় মাস। তোমাদের উপরে আল¬াহ তায়ালা অত্র মাসের রোজা ফরয করেছেন। এ মাসের আগমনে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, আর আল¬াহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ী পরানো হয়। এ মাসে একটি রজনী রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সেই রজনীর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল”। (সুনানে আন-নাসায়ী)। —-ক্বদর কখন। এ রজনী কোন মাসে সে বিষয়ে সূরা বাক্বারাহ এর ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল¬াহ তায়ালা নিজেই বলেছেন- “রামাদ্বান মাস। যে মাসে নাযিল হয়েছে কুরআনুল কারীম। মানবজাতির জন্য হেদায়াত ও হেদায়াতের স্পষ্ট ব্যাখ্যা হিসাবে এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে”। (বাক্বারাহ ১৮৫)। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর সাথে রামাদ্বান মাসের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। তিনি বলেন, আমাকে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়েছিল। পরে তা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রামাদ্বান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে তা অনুসন্ধান করো”। বুখারী ও মুসলিম শরীফের আরো একটি হাদিসে এসেছে- “হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম রামাদ্বান মাসের শেষ দশকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ইবাদাতে অধিক মশগুল থাকতেন”। বুখারী ও মুসলিম শরীফে অন্য হাদিসে এসেছে- “হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম রামাদ্বান মাসের শেষ দশকে রাত জাগতেন, তহবন্দ শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে ইবাদাতে মশগুল হওয়ার জন্য জাগিয়ে দিতেন”। তিরমিজী শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত আব্দুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লাইলাতুল ক্বদর প্রসঙ্গে একবার আবূ বাকরা (রাঃ) এর কাছে আলোচনা হল। তিনি বললেন, রাসূলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর একটি বাণী শোনার কারণে আমি রামাদ্বান মাসের শেষ দশদিন ব্যতীত অন্য কোন রাত্রে লাইলাতুল ক্বদরকে খোঁজ করি না। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তোমরা ক্বদরের রাত খোঁজ কর রামাদ্বানের নয়দিন বাকী থাকতে বা সাতদিন বাকী থাকতে বা পাঁচদিন বাকী থাকতে বা তিন দিন বাকী থাকতে অথবা এর শেষ রাত্রে”। আবু দাউদ শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত যির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উবাই ইবনে কাব (রাঃ) কে আমি বললাম, হে আবুল মুনযির! এই যে সাতাশের রাত লাইলাতুল ক্বদর, আপনি সেটা কি করে জানতে পারলেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই, আমাদেরকে রাসূলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম বলেছেন যে, এই রাত্রের পরবর্তী সকালে সূর্য উদিত হয় ক্ষীণ আলো নিয়ে দীপ্তিহীন অবস্থায়। আমরা সেটাকে গুনে এবং স্মরণ করে রেখেছি। আল¬াহ তায়ালার শপথ! ইবনে মাসঊদ (রাঃ) ও জানেন যে, সেটা হচ্ছে রামাদ্বানের রাত্র এবং সাতাশেরই রাত্র। কিন্তু তোমাদেরকে তিনি তা জানাতে পছন্দ করেননি, তোমরা যদি পরে এটার উপর নির্ভর করে বসে থাক”। বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল¬াহর রাসূল সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে জানানোর জন্য বের হলেন। তখন দুজন মুসলমান বিবাদ করছিল। তিনি বললেন, আমি তোমাদের লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে জানানোর জন্য বেরিয়েছিলাম, কিন্তু তখন অমুক অমুক বিবাদে লিপ্ত থাকায় তা (লাইলাতুল ক্বদর নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর হয়তো বা এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তোমরা তা অনুসন্ধান কর (রামাদ্বানের) ২৭, ২৯ ও ২৫ তম রাতে”। এতদ্ব্যতীত রাসূলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর সমস্ত হাদিস একত্রিত করলে এ রাত্রিকে নির্দিষ্ট করার কোন উপায় নেই। যদি ২৭ এর রাত্রি নির্দিষ্ট হত, তাহলে রাসূল সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম ও সাহাবীগণ কেবল এ রাতেই ইবাদতে রত থাকতেন। কিন্তু তাঁদের আমল ছিল এর বিপরীত। তারা শেষ দশকে ইতিকাফে ও ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। অথচ আমরা কেবল ২৭ রাত্রিকেই শবে ক্বদর ধরে নিয়েছি এবং এ রাত্রিকে ইবাদতের জন্য এমনকি ওমরাহর জন্য খাছ করে নিয়েছি। অথচ ৮ম হিজরীর ১৭ই রামাদ্বান মক্কা বিজয়ের পর রাসূল সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম ১৯ দিন সেখানে অতিবাহিত করেন। কিন্তু তিনি বা তাঁর সঙ্গী সাহাবীগণের কেউ ২৭শে রামাদ্বানে বিশেষভাবে শবে ক্বদর পালন করেননি বা ওমরাহ করেননি। কেননা রাসূলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এ রাতটিকে বিশেষভাবে নির্ধারণ করেননি। অথচ আমরা এটাকে নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে অনুষ্ঠান প্রিয় হয়ে পড়েছি। এবং শর্টকাট রাস্তায় জান্নাত পাওয়ার শয়তানী ধোঁকায় নিপতিত হয়েছি। আল¬াহ আমাদের রক্ষা করুন-আমীন! ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, আল¬াহ পাক এ রজনীকে গোপন রেখেছেন তার তাৎপর্য এই যে, বান্দা যেন সারা রামাদ্বান ইবাদতে কাটায় এবং শেষ দশকে তার প্রচেষ্টা যোরদার করে। (তাফসীরে ইবনে কাছীর)। —-ক্বদর রজনীতে ফেরেশতাগনের আগমন। এই রজনীতে রাহমাতের পশরা নিয়ে হাজার হাজার ফেরেশতাকে সঙ্গী করে রূহ (হযরত জীব্রাঈল) আল¬াহর বিশেষ অনুমতিক্রমে বিভিন্ন নির্দেশনা সহকারে আগমন করেন দুনিয়ার জমিনে। এবং এই সময় তাঁরা পৃথিবীতে আল¬াহর রাহমাত বিতরণ করেন। এখানে ‘রূহ’ অর্থ জীব্রাঈল (আঃ)। যেমন সূরা মারিয়াম এর ১৭ নম্বর আয়াতে আল¬াহ বলেছেন-অতঃপর আমরা তার (মরিয়ামের) নিকটে আমাদের রূহকে (জীব্রাঈলকে) পাঠালাম। অতঃপর সে তার (মরিয়ামের) নিকটে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল”। অমনিভাবে সূরা শো’আরার ১৯৩ নম্বর আয়াতে আল¬াহ তায়ালা বলেছেন- “বিশ্বস্ত ফেরেশতা (জীব্রাঈল) একে (কুরআনকে) নিয়ে অবতরণ করে”। আলোচ্য আয়াতে ফেরেশতাগণ বলার পরে পৃথকভাবে রূহ বলে ফেরেশতাগণের সর্দার হিসাবে জীব্রাঈল (আঃ) এর স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে নির্দেশনা অর্থ আল¬াহর বিভিন্ন নির্দেশনা সহকারে। যেমন সূরা রাদের ১১ নম্বর আয়াতে আল¬াহ তায়ালা বলেছেন- “ফেরেশতাগণ তাকে (মানুষকে) হেফাজত করে থাকে আল¬াহর নির্দেশে”। হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন- “আল¬াহর ঐ সকল নির্দেশ সহকারে যা তিনি আগামী এক বছরের জন্য নির্ধারিত করেছেন ও ফায়সালা করেছেন” (তাফসীরে কুরতুবী)। হযরত ক্বাতাদাহ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন- “যাতে বিভিন্ন বিষয়ের সিদ্ধান্ত থাকে এবং মৃত্যু ও রূজীর হিসাব নির্ধারিত থাকে”। (তাফসীরে ইবনে কাছীর)। যেমন সূরা দুখানের ৪ নম্বর আয়াতে আল¬াহ তায়ালা বলেছেন- “এ রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়”।—ক্বদরের শান্তি। এ রজনীতে শান্তিই বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। হযরত ক্বাতাদাহ ও ইবনে যায়েদ বলেন- এ রজনীতে কেবলই মঙ্গল। ফজর পর্যন্ত কোন অমঙ্গল নেই। (তাফসীরে ইবনে কাছীর)। হযরত দ্বাহাক বলেন- এ রজনীতে আল¬াহ শান্তি ব্যতীত অন্য কিছুই নির্ধারণ করেন না। হযরত মুজাহিদ বলেন- এটি নিরাপদ রজনী। এ রজনীতে শয়তান কোন মন্দ বা কষ্টদায়ক কাজ করতে সক্ষম হয় না। হযরত শাবী বলেন- এ রজনীতে মাগরিব হতে ফজর পর্যন্ত ফেরেশতাগণ মসজিদের মুছল¬ীদের উপরে এবং প্রত্যেক মুমিনের উপরে সালাম করে বলেন- “হে মুমিন আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হউক”! (তাফসীরে কুরতুবী)। —-ক্বদরেও যারা মাফ না পেতে পারেন। উলে¬খ্য যে, এরাতের বারাকাত থেকে বঞ্চিত হয় ঐসব গৃহের মানুষ যেখানে রাহমাতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। যেমন আবু ত্বালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম বলেন, “ঐ গৃহে (বা স্থানে) (রাহমাতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না, যেখানে কুকুর বা প্রাণীর ছবি থাকে”। —ক্বদরের আমল ও দোয়া। এ রজনীতে যত বেশি আমল করবেন তাতে আপনার নিজের লাভ হবে। এ রজনীতে বেশি বেশি কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করা, নফল ইবাদত করা, নফল নামাজ সহ বেশি বেশি তাওবাহ ইস্তেগফার করে জীবনের গুনাহ মাফির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, সর্বদা বেশী বেশী প্রার্থনা করা মুস্তাহাব। রামাদ্বান মাসে আরও বেশী এবং রামাদ্বানের শেষ দশকে আরও বেশী। তন্মধ্যে শেষ দশকের বেজোড় রজনীগুলিতে সবচাইতে বেশী বেশী দোয়া করতে হবে। বিশেষভাবে যে দোয়াটি রাসূলুল¬াহ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম হযরত আয়শা (রাঃ) কে এ রজনীতে পড়ার জন্য শিক্ষা দিয়েছিলেন, দোয়াটি হচ্ছে- “হে আল¬াহ! তুমি ক্ষমাশীল! তুমি ক্ষমা করতে ভালবাসো। অতএব আমাকে ক্ষমা কর”। সর্বোপরি এ রজনীর অপরিমেয় ফজিলত ও বারাকাত লাভের আশায় রামাদ্বানের শেষ দশকে বিশেষ করে বেজোড় রজনীতে সাধ্যমত ইবাদত করার চেষ্টা করতে হবে। যাতে কলুষিত অন্তরজগত পরিশুদ্ধ হয় এবং আল¬াহর নূর ও হেদায়াত লাভে ধন্য হওয়া যায়। আল¬াহ আমাদের সবাইকে মাফ করে হেদায়ত করুন এবং মহিমান্বিত ক্বদরের যত নিয়ামত ও বারাকাত আছে আমাদের নসিব করুন। এই মহিমান্বিত রজনীসহ সারা বছর তাঁর মকবুল গোলামী করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
লেখক : ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মসজিদ, যুক্তরাজ্য।