কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ মাহে রমজানের ২৩তম দিবস। গতকাল কেয়ামতের পূর্বাভাস সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজ দাজ্জালের আগমন সম্পর্কে কিছু আকিদাগত কথা। দুনিয়া নিয়ে আজকের যুগের লোকজন এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, কিয়ামত/পরকাল নিয়ে ভাববার অবসরই পায় না। কিন্তু হঠাৎ করে গত কিছুদিন ধরে ‘পৃথিবী ধ্বংস হবে’- এ নিয়ে নানা অভিমত শোনার পর মানুষের জিজ্ঞাসা ও উৎকণ্ঠার শেষ নেই। পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার বৈজ্ঞানিক ও জ্যোতিষ যুক্তি-তর্ক যেমন রয়েছে। তেমনি এ বিষয়ে রয়েছে ব্যাপক ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও পূর্বাভাস। কুরান-হাদিসের বর্ণনামতে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্বে এখানে বহুমাত্রিক ও নানা অস্বাভাবিক কর্মকা- পরিচালিত হবে। এখানে আবির্ভূত হবে দাজ্জাল নামের এক ভ- ও জালিম। আসবেন ঈসা নবী (আ)। নিম্নোক্ত দীর্ঘ হাদিসের মাধ্যমেই সে সব বিষয়ে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করব।
সাহাবী নাওয়াস ইবনে সাম’য়ান (রা) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘দাজ্জাল’ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি কখনও বিষয়টিকে অবজ্ঞার সুরে প্রকাশ করলেন আবার কখনও গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করলেন। এমনকি আমাদের ধারণা হলো দাজ্জাল খেজুর বাগানের কোন একস্থানে লুকিয়ে আছে। যখন আমরা তার কাছ থেকে ফিরে যাচ্ছিলাম তিনি আমাদের প্রকৃত অবস্থা বুঝে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কি হয়েছে? আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসুল (সা)! আপনি সকাল বেলা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। আপনি তা কখনও অবজ্ঞাভাবে এবং কখনও গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছিলেন। এতে আমাদের ধারণা হয়েছিল, সম্ভবত ওই সময়ে সে খেজুর বাগানের কোথাও অবস্থান করছে। তিনি বললেন Ñ তোমাদের ব্যাপারে আমি দাজ্জালের ফেতনার খুব একটা আশঙ্কা করি না। যদি আমার উপস্থিতিতে সে আত্মপ্রকাশ করে তবে আমি নিজে তোমাদের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াব। আর যদি আমার অবর্তমানে সে আত্মপ্রকাশ করে তবে প্রত্যেকে নিজেরাই তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আল্লাহ আমার অবর্তমানে তোমাদের রক্ষক। (এরপর মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) দীর্ঘ হাদিসে আরও বলেন) দাজ্জাল ছোট কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট একজন যুবক। তার চোখ হবে ফোলা। আমি তাকে আবদুল ‘উয্যা ইবনে কাতান সদৃশ্য মনে করি। যে ব্যক্তি তার সাক্ষাত পাবে সে যেন ‘সূরা কাহাফে’র প্রাথমিক আয়াতগুলি পাঠ করে। দাজ্জাল সিরিয়া ও ইরাকের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী রাস্তায় আত্মপ্রকাশ করবে। সে তার ডানে ও বামে হত্যা, ধ্বংস ও ফিতনা-ফাসাদ ছড়াবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ। অটল ও স্থির হয়ে থাক।’ আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (স)! সে কত সময় পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে? তিনি বললেনÑ চল্লিশ দিন। এর প্রথম একদিন হবে এক বছরের সমান (দ্বিতীয়) একদিন হবে একমাসের সমান এবং তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের সমান। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের এই দিনের মতোই দীর্ঘ হবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (স)! যে দিনটি একবছরের সমান হবে সে দিনের কি একদিনের নামাজই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন- না, বরং অনুমান করেই নামাজের সময় ঠিক করে নিতে হবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে রাসুলাল্লাহ (স)! পৃথিবীতে দাজ্জাল কত দ্রুতগতি সম্পন্ন হবে? তিনি বললেন ব্যাথাতাড়িত মেঘের মতো দ্রুতগতি সম্পন্ন হবে। সে এক সম্প্রদায়ের কাছে আসবে এবং তাদের নিজের দিকে আহ্বান করবে। তারা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তার হুকুমের অনুসরণ করবে। সে আসমানকে নির্দেশ দেবে। আসমান তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে। সে যমীনকে হুকুম দেবে এবং যমীন উদ্ভিদ উৎপাদন করবে। তাদের গৃহপালিত জন্তুগুলো সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে। এগুলোর কুঁজ সু উচ্চ দুধের বাঁটগুলো লম্বা এবং স্ফীত হবে। অতঃপর সে আরেক সম্প্রদায়ের কাছে আসবে এবং তাদের নিজের দিকে আহ্বান করবে। তারা তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের কাছ থেকে চলে যাবে। তারা অতি দ্রুত আজন্ম ও দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হবে। তাদের হাতে ধন-সম্পদ কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। দাজ্জাল এই বিধ্বস্ত এলাকা দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলবে, তোমার গচ্ছিত সম্পদরাজি বের করে দাও। সঙ্গে সঙ্গে সে এলাকার ধন-সম্পদ মধু মক্ষিকার ন্যায় তার অনুসরণ করবে।
অতপর সে পূর্ণবয়স্ক এক যুবককে আহ্বান করবে। (কিন্তু সে তাকে অস্বীকার করবে)। দাজ্জাল তাকে তরবারি দিয়ে দ্বিখ-িত করে ফেলবে। অতঃপর টুকরো দুটোকে পৃথকভাবে একটি তীরের পাল্লা পরিমাণ দূরত্বে রাখবে অতঃপর সে ডাকবে এবং টুকরো দু’টো চলে আসবে। তার চেহারা তখন প্রফুল্ল ও হাস্যময় হবে। (মানুষের ইমানি দৃঢ়তা পরীক্ষা করার জন্য কানা দাজ্জালকে এমন আজগুবি চরিত্র গিয়ে প্রেরণ করা হবে)। ইত্যাবসরে আল্লাহতায়ালা মাসীহ ইবনে মরিয়াম আলাইহিস সালামকে পাঠাবেন। তিনি দামেস্কের পূর্ব অংশে সাদা মিনারের ওপরে হাল্কা জাফরানি (হলুদ) রংয়ের কাপড় পরিহিত অবস্থায় ফেরেস্তাদের কাঁধে ভর দিয়ে নেমে আসবেন। যখন তিনি মাথানত করবেন তখন মনে হবে যেন, তার মাথায় মুক্তার মতো পানির বিন্দু টপকাচ্ছে। যখন তিনি মাথা উঠাবেন তখনও তার মাথা থেকে মোতির দানার মতো ঝরছে বলে মনে হবে। যে অবিশ্বাসীর গায়ে তার নিশ্বাস লাগবে তার বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। (সঙ্গে সঙ্গে মরে যাবে)। তার দৃষ্টি যতদূর যাবে তাঁর নিশ্বাসও ততদূর পৌঁছবে। তিনি দাজ্জালকে পিছু ধাওয়া করবেন এবং লুদ নামক স্থানে তাকে হত্যা করবেন। সহীহ তিরমিযীসহ বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থসমূহের কাছাকাছি ধারণায় এমন বেশকিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। শেষ জামানায় এক আল্লাহতে বিশ্বাসী তাওহীদবাদী মুসলমানরা নানা পরীক্ষায় ও বিড়ম্বনায় নিপতিত হবে। এর মধ্যে দাজ্জালের ফেতনা অন্যতম। আল্লাহর কাছে এ ফেতনার যুগ থেকে বাঁচার জন্য ফরিয়াদ করতে হবে।