কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে আদালত চালু হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা সুফল পাচ্ছেন। সঙ্কট দূরীভুত হচ্ছে বিচারাঙ্গণে। বিচার বিভাগ এর মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। গত কয়েকদিনে বিচারিক আদালতগুলো থেকে তিন সহস্র্রাধিক আসামি জামিন পেয়েছেন। ফলে দেশের করাগারগুলোতে বন্দীদের চাপ কমছে। কারাগারগুলোতে যারা লঘু অপরাধে আটক আছেন সেই সমস্ত আসামিরা বিচার পাচ্ছেন। সুপ্রীমকোর্টের এ্যাটর্নি কার্যালয় আইন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিলেও অধিকাংশ বিচারিক আদালতের আইনজীবী ও কর্মকর্তাবৃন্দ এই পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। কাজেই দেশের বার সমিতিগুলোকে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণের জন্য এদিকে আসতে হবে। তা হলেই ভার্চুয়াল কোর্টের পদ্ধতি সম্পর্কে সবাই ধারণা লাভ করে কাজ করতে পারবেন। পাশাপাশি আদালতের পরিধি আরও বাড়বে বলে আইনজীবীদের অভিমত। আইনজীবীগণ আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট বেশিদিন থাকবে না। দেশের অবস্থা শীঘ্রই ভাল হবে। শীঘ্রই নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম শুরু হবে।
ইতোমধ্যে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে চেম্বার জজ ও হাইকোর্টের চারটি ভার্চুয়াল কোর্টের বেঞ্চে বিচার কাজ চলছে। পাশাপাশি দেশের অধিকাংশ বিচারিক আদালতে ভার্চুয়াল কোর্টের কাজ চললেও কিছু আদালতে এখন কাজ শুরু হয়নি। যে সমস্ত আদালতে গঠন করা হয়নি, সেগুলোতেও শীঘ্রই গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে গত কয়েকদিনে হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন আদালত থেকে জামিন দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতে বেশ কিছু রিট দায়ের করা হয়েছে। আইনজীবীগণ বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক দেখছেন। তাদের অভিমত আদালত বন্ধ থাকায় যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল, ভার্চুয়াল কোর্টের কারণে তার অনেকাংশেই সঙ্কট দূরীভুত হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গুজরাট হাইকোর্টের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চলছে বিচার কাজ। বাংলাদেশে অনলাইন কোর্ট চালুর ক্ষেত্রে আইনী সীমাবদ্ধতা থাকায় করোনার পরিস্থিতির কারণে আদালতের বন্ধ দুয়ার খুলতে অনলাইনে কোর্ট চালুর বিধানে অনুমোদন দেয়া হয়। ভার্চুয়াল কোর্ট চালুতে প্রযুক্তিগত বিষয়ে কাজ শুরু করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। জটিল বিষয়গুলো ছাড়া আপাতত প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস এই কোর্টের মাধ্যমে করা হয়, তাহলে ন্যায়বিচার হবে। এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় অনলাইনে কোর্ট চালুর আগে বিচারক, আইনজীবী ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অন্যদিকে বিচারিক আদালতে প্রশিক্ষণ না থাকায় কিছু কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর প্রথম চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ ছিল। আদালত বন্ধ থাকায় লোকজন জামিন পাচ্ছিল না। অনেকেই মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে আটক আছে। তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। আদালতে গেলে জামিন হতো না। এ সমস্ত অসুবিধাগুলো দূর করতেই ভার্চুয়াল কোট গঠন করা হয়েছে। জনগণ জামিন চাইতে পারছে। জামিন পাচ্ছেও । এর ফলে সঙ্কট দূরীভুত হয়েছে। দ্বিতীয়ত : বিচারিক আদালতের আইনজীবী ও কর্মকর্তাগণ এই আদালত সম্পর্কে অভিজ্ঞ নন। সেজন্য বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে এগিয়ে আসতে হবে। সমিতিই আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেবে। যারা কম্পিউটার চালাতে পারেন তাদের দিয়ে এ সমস্ত প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন , আমি মনে করি ভার্চুয়াল কোর্ট বেশিদিন থাকবে না। অবস্থা শীঘ্রই ভাল হবে। শীঘ্রই নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম শুরু হবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে যেগুলো জরুরী ভিত্তিতে শোনার প্রয়োজন আদালত তা শুনবে। এই পদ্ধতিটি খুবই ভাল পদক্ষেপ। এতে করে বিচারপ্রার্থী জনগণ অনেকাংশে উপকৃত হবে। সরকারের এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। অবশ্যই এটি ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। এটি আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও এটি একটি ভাল উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। কেননা করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আদালত বন্ধ। মনে হচ্ছে দেশে কোন আদালতই নেই।
ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। সরকারের এ সিদ্ধান্তে আমি খুবই আনন্দিত। এজন্য প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। দীর্ঘদিন ধরে আদালত বন্ধ রয়েছে। ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর মাধ্যমে কিছুটা হলেও সেই বন্ধ দশার অবসান হবে। এর মাধ্যমে দেশের বিচার বিভাগ প্রকৃত অর্থে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। জেলখানার যারা আছে তারা বিচার পাচ্ছে।