কাজিরবাজার ডেস্ক :
পুলিশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এদিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) শাখার কনস্টেবল তোফাজ্জল হোসেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।
প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের আরও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথা বলেছেন। কারণ পুলিশ যদি বেশি হারে আক্রান্ত হয়, তাহলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কারণেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
পুলিশ সদর দফতরের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে আরও ৬০ পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯১৪ জনে। ইতোমধ্যেই করোনাযুদ্ধে এ পর্যন্ত পাঁচ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৫৪ জন। যার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেরই আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪৯ জন। নতুন করে আক্রান্ত হওয়ায় ডিএমপি পুলিশের আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই মাঠপর্যায়ে কাজ করা পুলিশ সদস্য।
ডিএমপি জানায়, করোনায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও তাদের দুই অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ও এক সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, পুলিশের ৩১৫ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসায় ১২শ’ ৫০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে সোমবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) শাখার কনস্টেবল তোফাজ্জল হোসেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। সত্যিকার অর্থের তিনিই লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন নাকি তার মৃত্যুর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে তা খতিয়ে দেখছে খিলগাঁও থানা পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এ ব্যাপারে খিলগাঁও থানায় প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা জানান, জনগণের সুরক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য মাঠে আছেন। দায়িত্ব পালনের সময় তাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই তাদের এসব বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। বড় বড় কর্মকর্তারাও মাঠপর্যায়ে থাকা সদস্যদের সতর্ক করছেন। দায়িত্বরতদের অবশ্যই মাস্ক ও হ্যান্ডগ্ল্যাভস ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ রাখার জন্য সদর দফতর থেকে স্ব স্ব ইউনিটকে জানানো হয়েছে। আক্রান্তদের স্ব স্ব ইউনিটে রিপোর্ট করতে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ কড়া নির্দেশনা জারি করেছেন।
ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম জানান, পুুলিশকে আরও সচেতন হতে প্রতিদিন সচেনতামূলক ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ জানামাত্র তা স্ব স্ব ইউনিটকে অবহিত করতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ডিএমপির পুলিশ সদস্যের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ব্যক্তিগত অসচেতনতার পাশাপাশি বসবাস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়মাফিক ব্যবহার না করাও অনেকক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী।
প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাকে কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়, হাতে হা কলমে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে তাদের প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। তারপরেও অনেক সময়ই দেখা যায়, অনেক পুলিশ সদস্য এসব নির্দেশনা অমান্য করে ইচ্ছেমতো দায়িত্ব পালন করছেন। আবার অনেকেই রাস্তায় মাস্ক বা হ্যান্ডগ্ল্যাভস ব্যবহার না করেই দায়িত্ব পালন করেন। এতে করে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক কারণেই বেড়ে যায়। তাদের নিরাপদ দূরত্ব থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হলেও অনেক সময় সেটা নানা কারণে সম্ভব হয় না। বিশেষ করে জনতা অনেক সময়ই পুলিশ সদস্যদের খুব কাছাকাছি চলে আসে। যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হচ্ছে, পুলিশ সদস্যদের অনেকেই ব্যারাকে বসবাস করেন। ব্যারাকে গাদাগাদি করে থাকার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। হয়তো দেখা গেল ব্যারাকে থাকা কোন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলেন, প্রাথমিক দিকে যেহেতু করোনাভাইরাসের লক্ষণ বোঝা যায় না, এজন্য তিনি স্বাভাবিক কারণেই ব্যারাকে বসবাস করতে থাকেন। তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। তার থেকে অনেকেরই সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকছে।