কাজিরবাজার ডেস্ক :
আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহ পাকের অশেষ শুকরিয়া আমরা পবিত্র মাহে রমজানে রহমতের ১ম দশক অতিক্রম করে আজ মাগফিরাতের দশকে প্রবেশ করতে শুরু করেছি। হুজুর (স.) আমাদের সিয়াম সাধনায় উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেছেন, আউসাতুহু মাগফিরাহ অর্থাৎ মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশক ক্ষমা প্রার্থনার ও ক্ষমা প্রাপ্তির। আসলে একজন বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, সবচেয়ে বড় অর্জন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও মার্জনা লাভ। এখন সে সুযোগ আমাদের দ্বারপ্রান্তে, ইবাদত, রিয়াযত ও তওবা এস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে হবে। বস্তুত: বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার সুসংবাদ প্রাপ্তির চেয়ে আর কোন বড় পাওনা নেই। এজন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) তার প্রিয়তম স্ত্রীকে দোয়া মোনাজাত শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেছেন, আয়েশা তুমি আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারীম তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নীÑ হে আল্লাহ! তুমি তো বড় ক্ষমাশীল, দয়াবান। ক্ষমা করাকে পছন্দ কর। সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর।’ বস্তুত আখিরাতের হিসাব নিকাশ এত জটিল ও ইনসাফপূর্ণ যে আল্লাহ যদি কাউকে পাকড়াও করতে চান তাহলে নিস্তার নেই। এক্ষেত্রে যদি তার দয়ায় ক্ষমার মওকা মিলে তাহলেই কেবল তার নাজাত সম্ভব। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল এজন্য অত্যন্ত ব্যাকুল করা ফরিয়াদ করেছেনÑ রোজ হাশরে আল্লাহ আমার করো না বিচার/বিচার চাহি না চাহি খোদা করুণা তোমার….।’
এ সময় ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য আমাদের চিন্তা চেতনা ও আমলের মধ্যে শুদ্ধিতা আনতে হবে। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত আছে, হুজুরে করীম (স.) বলেছেন, এমন কোন বান্দা নেই, যে বেহুদা কথাবার্তা ত্যাগ করে আল্লাহ তায়ালার জিকির চর্চার সঙ্গে সঙ্গে তার হালালকে হালাল জেনে এবং হারামকে হারাম মনে করে রোজা রাখবে এবং সমস্ত রমজানের মধ্যে কোন খারাপ কাজ করবে না। (তবে অবশ্যই) রোজার মাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সমূদয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। তার প্রত্যেক তাসবিহ ও তাহলিলের বিনিময়ে বেহেস্তের মধ্যে একখানা প্রাসাদ তার জন্য তৈরি করা হয়।
হুজুরে পুর নূর হযরত মুহম্মদ (স) এর সুসংবাদ কার্যকর হওয়ার জন্য ও আখিরাতের পাথেয় লাভের জন্য আমাদের খুলুসিয়াতের সঙ্গে যথাযথভাবে সিয়াম সাধনায় কোশিশ করতে হবে। আমরা কখনো শয়তানের কুমন্ত্রণার সাড়া দেব না, লোভে পড়ে হারামের পথে অগ্রসর হব না। হালাল রাহে দীনহীনভাবে হলেও চলার প্রত্যয়ী হব। হারাম উপার্জন সমূদয় ইবাদত কবুলের পথের বড় অন্তরায়। বস্তুত হালাল পথে চলার জন্য নিজের ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট। আল্লাহ পাক জঙ্গলের বিশাল হাতি, সাগরের তিমি ও অথৈ জলে পাথরের নিচে শুয়ে থাকা ছোট প্রাণীটিরও রিজিকের ব্যবস্থা করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। পরওয়ার দিগার আল্লাহতে উজাড় করা ইমান ও সাধ্যমত শ্রমের মাঝে আমাদের সকলের জীবিকা এবং নাজাত উভয়ই নিহিত। মাগফিরাতের দশকে বিষয়টি পূর্ণভাবে আমলে আনার চেষ্টা করতে হবে।
মহানবী (স) ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে ‘কানা লাহু মাগফিরাহ’… তা তার জন্য ক্ষমা এবং দোজখ থেকে মুক্তির এক বিরাট ওয়াসিলা হয়ে থাকে। হযরত রাসুলে কারীম (স) বলেছেন : ৪টি কাজ রমজান মাসে বেশি বেশি করবে। দু’টি কাজ আল্লাহর জন্য আর দুটি কাজ যা না করলে তোমার উপায় নেই। তন্মধ্যে প্রথম দুটি হলো কালিমা- তাইয়্যেবা ও এস্তেগফার আর অপর দুটি হলো বেহেস্তের প্রত্যাশা এবং দোজখের অগ্নি থেকে পানাহ কামনা। (এমনিভাবে) যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোজাদারকে পানি পান করাবে, আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন তাকে হাউসে কাউসারের পানি পান করাবেন। অতপর বেহেস্তে প্রবেশ পর্যন্ত তার আর কোন পিপাসা হবে না।’ (বায়হাকী)। আখিরাতে নবীজীর হাতে হাউসে কাউসারের পানি পান করার সৌভাগ্য অনেক বড় প্রাপ্তি একজন আশেকে রাসুল বান্দার জন্য। আল্লাহ পাক আমাদের তোমার দয়া, রহমত ও মাগফিরাতের শামিয়ানার নিচে আশ্রয় পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।