করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর চলতি বছরের শুরুতে শ্রমবাজারের ওপর এর প্রভাব নিয়ে গত মার্চে সমীক্ষা শুরু করে আইএলও। তারপর এপ্রিলের শুরুতে একটি এবং এপ্রিলের শেষে এসে তৃতীয় প্রতিবেদনটি তারা প্রকাশ করেছে, যেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে লকডাউনের কারণে কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় বিশ্বে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ১৬০ কোটি শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন আইএলও। ‘আইএলও মনিটর থার্ড এডিশন : কভিড-১৯ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক’ শিরোনামে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে এপ্রিল থেকে যে হারে কর্মঘণ্টা কমে যাচ্ছে তা আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি আশঙ্কাজনক। সেই আশঙ্কার ইঙ্গিত আমরা এরই মধ্যে পাচ্ছি বাংলাদেশে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর দুর্দশায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। দিন আনে দিন খায় এমন মজুররা দিশাহারা। বিভিন্ন বেসরকারি হিসাবে শুধু রাজধানীতেই কমপক্ষে ৪২ লাখ দিনমজুর এখন খাদ্যের পর্যাপ্ত সহায়তার অভাবে তীব্র সংকটে আছেন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে বেশির ভাগ মানুষ কাজ বন্ধ রাখায় দিনমজুরের কাজ নেই, খাবারও নেই। দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক, বাসচালক, চালকের সহকারী, গৃহকর্মী এমন সব নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করা নিয়ে মহাসংকটে পড়েছেন। সহায়তা মিললেও তা যথেষ্ট নয়। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আরেকটি খবরে বলা হয়েছে, সাহায্যের দিকে তাকিয়ে কর্মহীন গৃহকর্মী ভাসমান মানুষ। প্রায় পাঁচ লাখ গৃহকর্মীর কাজ নেই। করোনার কারণে গৃহকর্তা গৃহকর্মীকে ছুটি দিয়েছেন। করোনাকাল কেটে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার কাজে যোগ দিতে বলেছেন। প্রায় এক মাস ধরে কোনো কাজ নেই। তাদের ঘরে জমানো কোনো অর্থ না থাকায় খাদ্যসংকটে পড়েছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় তাদের কাছে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। রাজধানীর অনেক দিনমজুর ও গৃহকর্মী এখানকার ভোটার না হওয়ায় সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আছে। সব শ্রেণির অসহায় মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ে এনে জীবন রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষ বাঁচানোই এখন প্রধান কাজ।