॥ আতিকুর রহমান নগরী ॥
ব্যঞ্জন বর্ণের চারটি বর্ণ দ্বারা গঠিত একটি ক্ষুদ্র শব্দের নাম ‘ভালোবাসা’। যাকে আরবিতে ‘মুহাব্বত’ ও ইংরেজী ভাষায় ‘লাভ’ বলা হয়। যার অর্থ হচ্ছে, অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান; যা মানুষের অন্তরে আল্লাহপাক সৃষ্টিগতভাবে দিয়ে দেন।
তবে উইকিপিডিয়া মুক্ত বিশ্বকোষে ভালোবাসার সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এভাবে ‘ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেয়া, এমনকি শরিরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায়না। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিস্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি। প্রকৃত অর্থে ভালবাসা দু’ধরনের হয়ে থাকে (১) বৈধ ও পবিত্র (২) অবৈধ ও অপবিত্র। বিবাহের পূর্বে আধুনিক যুবক-যুবতীরা যে সম্পর্ক গড়ে তোলে তাকেই অবৈধ ও অপবিত্র ভালবাসা বলে। আর পবিত্র ভালোবাসা বলতে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা ইত্যাদিকে বুঝায়। আল্লাহপাক কুরআন শরিফে এরশাদ করেন, ‘যারা ঈমানদার মুমিন, তাদের অন্তরে আল্লাহর মহব্বত ভালোবাসা হবে সর্বাধিক প্রগাঢ়।’ (সুরা বাকারা/১৬৫) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘কোনো লোক পূর্ণ মুমিন হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না সে নিজের জীবন এবং পরিবার পরিজনের চেয়ে আমাকে বেশী ভালোবাসবে।’
শরিয়তের দৃষ্টিতে ভালোবাসা : সবধরনের অশ্লীলতা-বেহায়াপনা তথা গুনাহের দরজাগুলো বন্ধ করার জন্য শরিয়ত এসেছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রা.) বলেন, ‘ইশক বা প্রেম একটি মানসিক ব্যাধি। আর যখন তা প্রকট আকার ধারণ করে শরীরকেও তা প্রভাবিত করে। সে হিসেবে তা শরীরের পক্ষেও ব্যাধি। মস্তিষ্কের জন্যও তা ব্যাধি। এ-জন্যই বলা হয়েছে, এটা একটা হৃদয়জাত ব্যাধি। শরীরের ক্ষেত্রে এ ব্যাধির প্রকাশ ঘটে দুর্বলতা ও শরীর শুকিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।’ (মাজমুউল ফাতওয়া: ১০/১২৯) তিনি আরও বলেন, ‘পরনারীর প্রেমে এমন সব ফাঁসাদ রয়েছে যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গুণে শেষ করতে পারবে না। এটা এমন ব্যাধির একটি যা মানুষের দীনকে নষ্ট করে দেয়। মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনাকে নষ্ট করে দেয়, অতঃপর শরীরকেও নষ্ট করে।‘ (মাজমুউল ফাতওয়া: ১০/১৩২) বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রেম-ভালোবাসার ক্ষতি জানার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এটা হলো হৃদয়ের বন্দিদশা, আর প্রীতিভাজনের জন্য দাসত্ব, প্রেম-ভালোবাসা অসম্মান, অপদস্থতা ও কষ্টের দরজা। প্রেমপ্রীতি শূন্য হৃদয়ের আন্দোলন। হৃদয় যখন আল্লাহর মহব্বত ও স্মরণ থেকে শূন্য হয়ে যায়, আল্লাহর কাছে দোয়া-মোনাজাত ও আল্লাহর কালামের স্বাদ গ্রহণ করা থেকে যখন শূন্য হয়ে যায় তখন নারীর ভালোবাসা, ছবির প্রতি আগ্রহ, গান-বাজনা শোনার আগ্রহ তার জায়গা দখল করে।
স্বামী-স্ত্রীকে ভালোবাসার ফযিলত : হাদীস শরিফে আছে, স্বামী-স্ত্রী মহব্বতের সাথে আলাপ আলোচনা করা কথা-বার্তা বলা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। অন্যথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে মহিলা (স্ত্রী) তার স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় সে অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে।
সন্তানকে ভালোবাসার ফযিলত : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ সন্তান ফাতিমাকে অত্যধিক ভালোবাসতেন। তিনি স্বীয় জীবনে এরশাদ করেন, ফাতিমা আমার কলিজার টুকরো, তাকে কেউ কষ্ট দিলে আমাকেই কষ্ট দেয়া হবে। নবীজীর পাক জবানের বর্ণনায় ফুটে উঠে যে সন্তানকে ভালোবাসা সওয়াবের কাজ। পক্ষান্তরে আমাদের সমাজে বেগানা যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীরা প্রেম-ভালোবাসার নামে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির উত্তাল সাগরের উর্মিমালার মত বহমান রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ও হারাম। বিবাহের পূর্বে এরূপ প্রেম-ভালোবাসা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়, অবৈধ। ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী কোন যুবতী কোন অবস্থায় কোন যুবকের সান্নিধ্যে থাকতে পারে না।
উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন পুরুষ যখন কোন নারীর সাথে একান্তে থাকে, তখন তাদের মাঝে তৃতীয় জন হিসেবে উপস্থিত হয় স্বয়ং শয়তান তাদের মাঝে ভাবাবেগকে উৎসাহিত করে এবং উভয়ের মাঝে খারাপ কুমন্ত্রণা দিতে থাকে এবং সর্বশেষে লজ্জাকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়। এতে তারা নিজেরা যেমনি কঠিন গোনাগার হবে, তেমনি তাদেরকে এই মেলামেশার সুযোগ দেয়ার কারণে তাদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকদেরকে হাদীস শরিফে দাইয়ুস বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, দাইয়ুস জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই এইসব ব্যাপারে সকলের কঠোরভাবে সাবধান হওয়া জরুরি এবং তা ঈমানের দাবি।