বাংলাদেশে নতুন করে দুজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই দুজনের একজন হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন, অন্যজন বিদেশফেরত একজনের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট ১০ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ল, যাঁদের মধ্যে প্রথম দফায় আক্রান্ত তিনজন এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি সাতজন।
দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে যে খবর আসছে, তা খুব একটা ভীতিকর নয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা মানুষের মুখে মুখে যে খবর ছড়াচ্ছে, তাতে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া চোখে পড়ার মতো পদক্ষেপ হচ্ছে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা। বিদেশ থেকে আসা সব ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন থেকে যাঁরাই বিদেশ থেকে আসবেন সবাইকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তাঁরা কোনো অবস্থায়ই ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। তাঁরা যদি এই নির্দেশনা না মানেন তাহলে তাঁদের প্রচলিত সংক্রামক ব্যাধি আইনের আওতায় জরিমানা ও জেল দেওয়ার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরো একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে দেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রস্তুতি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের হাসপাতালগুলো কি সত্যিই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে পেরেছে? নাকি প্রস্তুতিতে ঘাটতি আছে?
মনে রাখা দরকার, করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। সংকটটিও বৈশ্বিক। এখানে প্রস্তুতি থাকতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। একটা জাতীয় রেসপন্স দল থাকাটা এখন বোধ হয় জরুরি। জেলায় জেলায় শুধু নয়, উপজেলা পর্যায়েও এ জাতীয় দল গঠনের সময় এসেছে বলে মনে হয়। কিন্তু প্রস্তুতির শুরুতেই যে প্রশিক্ষণ থাকা দরকার, তা কি নিশ্চিত করতে পেরেছি আমরা? যে চিকিৎসক ও সেবিকা করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিতে যাবেন, প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাঁদের বিশেষ পোশাকও তো থাকতে হবে। তা কি নিশ্চিত করা গেছে? দেশের উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোকেও সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসা উপযোগী করে তোলা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে রোগী শনাক্তকরণের কিট সর্বত্র নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসাধীন কোনো রোগী মুমূর্ষু অবস্থায় চলে গেলে তাদের চিকিৎসায় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র তো দেশের জেলা পর্যায়ের সর্বত্র পাওয়া যাবে না। দেশের সব হাসপাতালে সুরক্ষার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। যেসব চিকিৎসক, নার্স রোগীর কাছাকাছি যাবেন, তাঁদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা জরুরি। রোগীর জন্য সুরক্ষিত বিশেষ বাহনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সরকারিভাবে আক্রান্তের সংখ্যা যত কমই বলা বা দেখানো হোক না কেন, বিষয়টিকে এখন আর হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।