স্টাফ রিপোর্টার :
ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণের দায়েরকৃত মামলার ১ নম্বর প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর ও ৫ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম সিলেটের এডিশনাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে ফৌজধারী কার্য্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩ টা ২০ মিনিট থেকে একে একে ওই আসামীরা প্রায় রাত ৯ টা পর্যন্ত পৃথক আদালতে জবানবন্দী প্রদান করে।
এর মধ্যে আসামী সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করের জবানবন্দী রেকর্ড করেন এডিশনাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো: জিয়াদুর রহমান আর আসামী রবিউলের জবানবন্দী রেকর্ড করেন সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সাইফুর রহমান।
এর আগে গতকাল দুপুরে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য রাজন ৫দিনের রিমান্ড শেষে আসামি সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে পৃথক আদালতে হাজির করেন।
আদালতে অভিযুক্ত জবানবন্দীকারী ৩ আসামী হচ্ছে, সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়া গ্রামের মো: তাহিদ মিয়ার পুত্র বর্তমানে এমসি কলেজ হোস্টেল সুপারের বাংলো ৫ম ব্লকের বাসিন্দা সাইফুর রহমান (২৮), জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামের কানু লস্করের পুত্র বর্তমানে টিলাগড় রাজপাড়ার বাসিন্দা অর্জুন লস্কর (২৫) ও সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের ও বর্তমানে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম (২৫)। অপর রিমান্ডে থাকা ৫ আসামীরা হচ্ছে, মামলার ২ নম্বর আসামী তারেকুল ইসলাম উরফে তারেক (২৮), ৩ নম্বর আসামী শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), ৬ নং আসামী মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), সন্ধিগ্ধ আসামী মো: আইনুদ্দিন (২৬) ও রাজন মিয়া (২৫)। তাদের আজ শনিবার রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য রাজন গতকাল রাতে আদালতে এই প্রতিবেদককে বলেন, যথারীতি নিয়ম অনুযায়ী ৫দিনের রিমান্ড শেষে আসামি সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে সিলেটের এডিশনাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে হাজির করি। এসময় তারা ওই আদালতে একে একে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করে। আদালতে আসামীরা কি জানিয়েছে বা রিমান্ডে কি বলেছে এ ব্যাপারে মামলার এই তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাবে না। তিনি বলেন, অপর আসামীদের রিমান্ড শেষে একই নিয়মে আদালতে হাজির করা হবে।
তবে মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রথম দিকে তারা একে অন্যের উপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত ছিলো। নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলেও অবশেষে সাইফুর, অর্জুন ও রবিউল এ ঘটনা স্বীকার করে। তারা আদালতকে জানায়, রাজন, আইনুদ্দিন তাদের নিয়ে এসেছিলো।
সুত্র জানায়, মামলার ৪র্থ আসামী অর্জুন লস্কর আদালতে প্রথমেই নিজের দোষ স্বীকার করে। সে জানায়, বাইরে থেকে ওই মহিলাকে হোস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভেতরে স্বামীকে আটকে রেখে গাড়িতেই ধর্ষণ করা হয়েছে। অর্জুন লস্করের পর আদালতের জবানবন্দি দেয় প্রধান আসামী সাইফুর রহমান। সে আদালতে ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেছে। তবে সাইফুর ঘটনার মুল হোতা হিসেবে রাজন, আইনুদ্দিন ও তারেকের নাম উল্লেখ করেছে। সর্বশেষ জবানবন্দি গ্রহণ করা হয় রবিউলের। সেও একই ভাবে ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেছে বলে আদালত পুলিশ জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, বেড়ানো শেষে বাড়ি ফেরার পথে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এমসি কলেজের গেইট থেকে ৫-৬ জন যুবক জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায় দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর গ্রামের বর্তমানে চকেরবাজার এলাকার এক দম্পতিকে। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে ১৯ বছরের গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে আসামীরা। এ ঘটনায় পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর শনিবার ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা (নং-২১) দায়ের করেন ভুক্তভোগীর স্বামী মাইদুল ইসলাম। এ জঘ্যতম ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। পরে ৪ দিনের মাথায় সিলেটের র্যাব-পুলিশ সিলেটের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারনামীয় ৬ আসামী ও সন্ধিগ্ধ ২ আসামীসহ মোট ৮ আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।