কাজিরবাজার ডেস্ক :
নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চলে। সবচেয়ে বেশি উপদ্রুত দেশ ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৩০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৬৬ জন। একদিনে মারা গেছেন ১৩৩ জন। এছাড়া চীনের মূল ভূখণ্ডে ৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, মারা গেছেন আরও ২২ জন। অন্যদিকে ইরানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৭ জনে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ১৬১ জন। খবর বিবিসি, সিএনএন ও আলজাজিরার।
জানুয়ারি মাসে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা চীন নিয়মিত জানানো শুরু করার পর রবিবার থেকে সেই সংখ্যা কমতে থাকে। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৭৩৫ জনে; আর ৩ হাজার ১১৯ জন মারা গেছেন সেখানে। মৃত ও আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা। দেশটির উহান শহরে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিনে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। তারপর থেকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও এখন চীনে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) করোনাভাইরাসে নতুন করে ৪০ জন আক্রান্ত ও ২২ জনের মৃত্যু হওয়ার কথা জানিয়েছে। যে ৪০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৩৬ জনই প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উহানের বাসিন্দা। বিদেশ ফেরতদের মধ্যে চারজনের দেহে ভাইরাসটির অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। এনএইচসি জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৬০০ রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
খারাপের দিকে ইউরোপ : ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতালির উত্তরাঞ্চলের একটি বড় অংশ অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের চলাচলে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। অন্যান্য অঞ্চলেও স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেমা হল, বার, নাইটক্লাব ও স্টেডিয়াম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় জমায়েতের ওপরও বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশী ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১১০০ ছাড়িয়ে গেছে, সেখানে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৯ জনের। জার্মানিতে এখনও পর্যন্ত ১ হাজার ১১২ জন আক্রান্ত হয়েছে। স্পেনে ৬৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছেন ১৭ জন। আর ব্রিটেনে ২৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন তিনজন।
একদিনে ১৩৩ মৃত্যু : ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় সমসংখ্যক লোক ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলেও ইতালিতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬৬ জনের। এরমধ্যে শুধু রবিবারেই মৃত্যু হয়েছে ১৩৩ জনের। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশটিতে ৭ হাজার ৩৭৫ জনের সংক্রমণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে ১ কোটি ৬০ লাখ লোককে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ঘোষণা দেন। উত্তরাঞ্চলীয় ১৪ প্রদেশের ওই মানুষগুলো এখন বিশেষ অনুমতি ছাড়া এলাকা ছাড়তে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে তিন মাসের কারাদণ্ড ও ২০৬ ইউরো জরিমানা গুনতে হবে। এছাড়া স্কুল, জিম, জাদুঘর, নাইটক্লাবও বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই অবস্থা বলবৎ থাকবে। ইতালির সেনাপ্রধান সালভাতর ফারিনাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃত বেড়ে ২২ : ওয়াশিংটনে আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫৬৫ জন হয়েছে। ৩১ অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা।
ভারতে আক্রান্ত ৪১ : তিন বছরের এক শিশুর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে ওই শিশু ইতালি থেকে দুবাই হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল। দুবাই হয়ে ফেরার পথে কোচি বিমানবন্দরে ডাক্তারি পরীক্ষায় তার শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। শিশুটির চিকিৎসা চলছে।
সৌদির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ : করোনা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। পূর্বাঞ্চলীয় তেলসমৃদ্ধ প্রদেশ কাতিফে কয়েকজনের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে অস্থায়ী অবরোধ জারি করা হয়েছে। প্রতিবেশী আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, ইরাক, ইরান ও মিসরসহ নয় দেশের সঙ্গে ভ্রমণও স্থগিত করেছে রিয়াদ।
কাতারে প্রবেশ নিষেধ : বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে কাতার। সোমবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তালিকার থাকা অন্য দেশগুলো হলো- চীন, মিসর, ভারত, ইরান, ইরাক, লেবানন, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া ও থাইল্যান্ড। কাতারে ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা ৩৮২৮ : করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৮২৮ জন। চীনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকায় উহানের বেশ কিছু অস্থায়ী হাসপাতালের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। চীনের পরিস্থিতি উন্নতি হলেও পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতালিতে। বিশ্বের ১০৯ দেশে ছড়িয়েছে করোনা। এসব দেশ থেকে নতুন রোগীর তথ্য জানানো হচ্ছে। যোগ হচ্ছে নতুন দেশের নাম। বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৪৮ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬২ হাজার ২৭৬ জন।
অন্যান্য দেশ : দক্ষিণ কোরিয়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭২ জন, এতে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৮২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ জনে।
স্যানিটাইজার বিলি : করোনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও নিয়ম মেনে জীবাণু প্রতিরোধে চমকের পর চমক দেখাচ্ছে ভুটান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ভুটানের রাজধানী থিম্পুর রাস্তায় নেমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডাঃ লোটে শেরিং।
দক্ষিণ আফ্রিকায় স্কুল বন্ধ : আতঙ্কে দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু নাটাল প্রদেশে ৩৭৬০ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির প্রভিন্সিয়াল সরকার। দেশটির বেসিক এডুকেশন মন্ত্রী এনজেলিক মুটসাড়ে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু নাটাল প্রদেশে ইতালি ফেরত ৩৮ বছরের এক কৃজ্ঞাঙ্গ নাগরিকের করোনা শনাক্ত হলে সরকার অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে সব স্কুল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।