মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে নদী খননের কবলে পড়ে দুই গ্রামের অসহায় ৩৬টি পরিবারের প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ ভিটাহারা হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এর মধ্যে ভয়ে দিশেহারা হয়ে ২২টি পরিবার তাদের বসত ঘর ভেঙে নিয়েছেন। আরো ১৪টি ঘর ভাঙনের কবলে হুমকির মুখে রয়েছে।অবশেষে একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন পুনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ১০/১২ দিন ধরে জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের পাথারিয়া দারারপার ও কাজিরগাঁও গ্রাম এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খাজানশি গাং নামের স্থানীয় নদী খনন কাজ শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে নদীর এক পারের মাটি তুললেও নদীর নিচের দিকে খনন করছে না। তবুও নদীর অন্য পারে থাকা বসত ও গাছপালা সরিয়ে নিতে চাপ দিলে অসহায় মানুষরা মামলা-হামলার ভয়ে নিজে তাদের ঘর বাড়ি ভেঙে ও গাছপালা কেটে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
৩ মার্চ মঙ্গলবার নদীপারে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় লোকজন মাথা গোঁজার ঠাঁই ফিরে পেতে ও পুনর্বাসনের দাবিতে সাদা কাগজে কলম দিয়ে হাতে লিখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। শালিসি ব্যক্তি সরাফত আলীর সভাপতিত্বে এবং সমাজসেবক এমরান হোসেন আনু ও শিক্ষার্থী মাসুম আহমদের যৌথ পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন পাথারিয়া দারারপার গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় ভূমিহীন পরিবারের রফিক আলী, আহমদ আলী, খোয়াজ আলী, আছমত আলী, আবদুল হাফিজ, আবদুল মমিন, আবদুল হান্নান, মাহমদ আলী, শিশু মিয়া, রমাই উল্লাহ, শফিক আলী, কমর আলী, আপ্তাব আলী, আবদুল জলিল ও কাজিরগাঁও গ্রামের লিটন মিয়া, আনহার আলী, তেরাব আলী, আবদুল মনাফ, মনসুর আলী, সানুর আলী, বাবরু মিয়া, নয়ন আলী, আলী হোসেন, ফয়জুল ইসলাম, চেরাগ আলী, সমতেরা বিবি, গ্রাম পুলিশ তেরাব আলী, হারুন মিয়া, সমর আলী, চান্দ আলী, সমর উল্লাহ, নেছার আলী, গয়াছ আলী, মর্তুজ আলী, তেরাব মিয়া প্রমুখ। এ সময় অন্যদের মধ্যে অংশ গ্রহণ করেন সাজিদ মিয়া, মকন মিয়া, সেবুল মিয়া, আনহার মিয়া সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ।
এ সময় মানববন্ধনে ভিটাহারা অসহায় ক্ষতিগ্রস্তরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দয়া করে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই রক্ষা করুন। আপনি মানবতার মা। আমরা ভূমিহীন অসহায় মানুষের কান্না শুনুন। নদী খননের নামে আমাদের বসত বাড়ি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হুমকিতে হামলা-মামলার ভয়ে আমরা নিজেরা নিজের ঘর ভাঙতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা এখন শিশু সহ পরিবারের লোকজন নিয়ে বিপদে আছি। কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। ৩৬টি পরিবারের ৩ শতাধিক মানুষ আশ্রয় চাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নদী খনন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পূবালী এন্টার প্রাইজের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার বাদল দাস বলেন, এখানে সরকারি ভাবে নদী খনন কাজ চলছে। তাদের বাড়িঘর তো ভেঙে দিতেই হবে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এ কাজ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অফিসারগণ তাদেরকে সরে যেতে বলেছেন। এছাড়া তিনি আর কিছুই বলতে চাননি।