অগ্নিঝরা মার্চ

73

কাজিরবাজার ডেস্ক :
১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে আন্দোলন শুরু হয়, তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। দিন যতই গড়াচ্ছিল স্বাধীনতার প্রশ্নে মুক্তিপাগল বাঙালী জাতির আন্দোলন অগ্নিগর্ভ রূপ নিচ্ছিল। একদিকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে স্থবির গোটা বাংলা, অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক জান্তারা কার্ফু দিয়েও আন্দোলন থামাতে পারছিল না। অনেকস্থানেই অহিংস আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ নিতে শুরু করে।
অগ্নিঝরা মার্চের আজ তৃতীয় দিন। একাত্তরের এ দিনগুলোতে মুক্তিকামী শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ছিল বিক্ষুব্ধ, প্রতিবাদমুখর। পাকিস্তানী শাসকদের কার্ফু অগ্রাহ্য করে ঢাকাসহ সর্বত্র অসংখ্য মিছিল হয়েছে। সংবাদপত্রে যাতে দুর্বার আন্দোলনের খবর প্রকাশিত হতে না পারে সেজন্য সামরিক জান্তা সেন্সরশিপ আরোপ করেছিল একাত্তরের এই দিনে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন চলছিল বাংলার সর্বত্র।
এদিকে একাত্তরের পহেলা মার্চ থেকেই পুরো বাঙালি জাতির দৃষ্টি ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু কী ঘোষণা দেন- সেদিকে। আর পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনা নয়, চাই মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। এই মুক্তির প্রত্যাশায় দেশের বিভিন্নস্থানে গঠিত হতে থাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ। গোপনে চলে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি। এসব সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে যোগ দিতে থাকে মুক্তির স্বপ্নে বিভর দেশে তরতাজা বাঙালী যুবকরা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পেলেই দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতে যে কোন আত্মত্যাগে প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালিরা।
অগ্নিগর্ভ মার্চের বাঙালির প্রবল আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা। কীভাবে বাঙালীর এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা যায় সে ব্যাপারে নীলনক্সা করতে থাকে সামরিক জান্তা ও তাদের এদেশীয় দোসররা। বিশ্বের কাছে স্বাধীনতার জন্য বাঙালির এই বাঁধভাঙ্গা আন্দোলন-সংগ্রামের খবর যাতে কোনভাবেই যেতে না পারে সেজন্য তৎপর হয়ে উঠে পাকি জেনারেলরা। শুধু সেন্সরশিপ আরোপই নয়, কোনভাবেই যাতে বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের খবর না ছাপা হয় সেজন্য প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে ফোন বা সশরীরে গিয়ে হুমকি-ধমকিও দেয়া হয়।
বাঙালি জাতির এমনই আন্দোলনের-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছিল প্রাণঘাতী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করে বীর বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছিনিয়ে এনেছিল মহামূল্যবান স্বাধীনতা। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি তাই নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করছে দেশমাতৃকার জন্য আত্মৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
এবার এক অন্যরকম আবহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি পালন করছে মার্চের নানা কর্মসূচী। কেননা আর মাত্র ১৩ দিন পর সেই মাহেন্দক্ষণ। শুরু হবে বছরব্যাপী ‘মুজিববর্ষ’। আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন। আগামী বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে মুজিববর্ষের উৎসব, নানা কর্মসূচী পালন। শুধু দেশেই নয়, ইউনেস্কোভুক্ত বিশ্বের সব দেশেই পালন করা হবে মুজিববর্ষের নানা অনুষ্ঠান।
আসম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি সোমবার ২ মার্চ প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস পালন করে। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে সরকারীভাবে এ দিনটি পালনের দাবি জানানো হয়।