কাজিরবাজার ডেস্ক :
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ নিয়ে বিক্ষোভে উত্তাল মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে বাংলাদেশ-সীমান্তবর্তী এক তল্লাটে এখনও পর্যন্ত সিএএর প্রতিবাদী, খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (কেএসইউ) এক সদস্যসহ ২ জন নিহত এবং কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। সিএএর বিরুদ্ধে ওই ছাত্র সংগঠনের একটি প্রচারসভার উপর শুক্রবার প্রথমে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে অনাদিবাসীদের একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তারপর ২ পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে রাজ্যে।
যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার শেলা বিধানসভা এলাকার ইছামতী গ্রামের অবস্থান রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে। ঘটনার পর শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে গোটা শেলায় এবং শিলংয়ের কিছু এলাকায়। শনিবার সকাল ৮টার পর কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করে কারফিউ নতুন করে বলবৎ করা হয়েছে।
শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য শেলায় মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ও এসএমএসের পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করেছে প্রশাসন। আপাতত দিনে ৫টির বেশি এসএমএস করা যাবে না। হামলায় আহত ৬ জনের মধ্যে একজনের দেহে ছোরার আঘাত রয়েছে। সিএএ বিরোধীদের পাশাপাশি জখম হয়েছেন কয়েকজন পুলিশকর্মীও। বেশ কয়েকটি বাসসহ যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়, আগুন ঘরিয়ে দেওয়া হয় একটি বাড়িতে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ওই তল্লাটে উত্তেজনা চরমে উঠেছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেএসইউয়ের নিহত সদস্যের নাম লুরশাই হাইনিউতা। খাসি জনজাতির ওই তরুণ চেরাপুঞ্জির বাসিন্দা। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে তিনি মারা যান। নিহত আরেকজনের পরিচয় শনিবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, জখম ৬ জনের মধ্যে একজন শনিবার মারা গেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা জানিয়েছেন, শেলার ঘটনার প্রভাব যাতে রাজ্যের অন্যত্র না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার সব রকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। শিলংয়ে সাংমা বলেন, ‘কিভাবে ওই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।’ রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মোবাইলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে ৫ টি জেলায়। রাজ্যজুড়ে চূড়ান্ত সতর্ক করা হয়েছে পুলিশকে।
খাসি ছাত্র সংগঠন একদিকে সিএএর বিরুদ্ধে এবং অন্যদিকে ইনার লাইন পারমিট বা আইএলপি কার্যকর করার দাবিতে জনমত গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে শুক্রবার ইছামতী গ্রামে সভা করছিল। অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুরের মতো রাজ্যে আইএলপি কার্যকর করা হয়েছে। আইএলপি হলো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই সব রাজ্যে প্রবেশের জন্য বিশেষ অনুমতি। আইএলপি কার্যকর করার জন্য মেঘালয় বিধানসভাও মাস চারেক আগে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি এখনও জারি করেনি। সেজন্য মেঘালয়ে আইএলপি বলবৎ করা যাচ্ছে না।
এই নিয়ে শুক্রবার যখন খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভা চলছে, তখন আচমকা তাদে উপর অনাদিবাসীরা হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের হাতে ছিরো চপার ও লাঠি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিয়ও ভাইরালও হয়েছে। আক্রমণে আহন হন কেএসইউয়ের বেশ কয়েকজন নেতা। তবে আচমকা ওই হামলার কারণ সম্পর্কে পুলিশ-প্রশাসন এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে।