৩০০ আসনের চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা এখন শেখ হাসিনার টেবিলে

18

কাজির বাজার ডেস্ক
বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে এটা মাথায় রেখেই মনোনয়ন তালিকা চ‚ড়ান্ত করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি না এলেও কেন্দ্রে ভোটার টানার মতো জনপ্রিয়, কর্মীবান্ধব প্রার্থীরা মনোনয়নে এগিয়ে থাকবেন। মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত করতে গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও স্থানীয় দলীয় প্রতিবেদন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সবার আমলনামা যাচাই-বাছাই শেষে ৩০০ আসনের প্রায় চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা এখন সভাপতি শেখ হাসিনার টেবিলে- এমনটাই জানান আওয়ামী লীগ নেতারা। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, মনোনয়নবাণিজ্য আর নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য হলেও বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। তাদের অংশগ্রহণ ধরে নিয়েই সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। না এলেও যাতে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বেশি থাকে সেজন্য গ্রহণযোগ্য ও ভালো মানুষ বাছাই করা হচ্ছে।
সবশেষ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের সভাপতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে বাদ পড়বেন অনেকেই। যাদের মনোনয়ন দেবেন, তাদেরও নিজগুণে পাস করে আসতে হবে। সভানেত্রী নিজেই জানিয়েছেন, নির্বাচনে কাদের মনোনয়ন দেবেন তার তালিকা চ‚ড়ান্ত করতে চলছে শেষ মুহ‚র্তের যাচাই-বাছাই।
এবার কিছু আসনে কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ যে আসনগুলোয় আওয়ামী লীগ কখনোই নির্বাচিত হতে পারেনি, সেখানে অপেক্ষাকৃত তরুণদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। যেন পরাজয় হলেও ভবিষ্যতে সংগঠন গোছাতে পারে। এছাড়া আরপিওর বিধিপালনে নারী আর ভবিষ্যৎ রাজনীতি গোছাতে তারুণ্য গুরুত্ব পাবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়নের অনেক কাজ এগিয়ে রেখেছেন নেত্রী। তার টেবিলে প্রায় চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এটি। নেত্রী কয়েক দফা মাঠ জরিপ করিয়েছেন। সব রিপোর্ট তার হাতে আছে। তফসিলের পর মনোয়নের আবেদন নেবেন, পরে তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে মনোনয়নের তালিকা ঘোষণা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘সৎ, কর্মঠ, নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এতে তরুণ ও প্রবীণের সমন্বয় থাকবে নিশ্চয়ই।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে নেত্রী ৩০০ আসনের সব এমপির আমলনামা নিয়েছেন। শুধু গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছেন না। তিনি ব্যক্তিগত, দলীয়সহ বিভিন্নভাবে তথ্য-উপাত্ত নিয়েছেন। সেগুলোর ওপর কাজ করে রেডি করে রেখেছেন। শেষ পর্যায়ে এসে তিনি সেগুলো আবার যাচাই করছেন।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে মনোনয়ন তাদেরই দেওয়া হবে যারা কর্মীবান্ধব, জনপ্রিয় এবং যাদের এলাকার ভোটাররা পছন্দ করেন। যাতে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসেন। কারণ ভালো মানুষ প্রার্থী না হলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে চান না। এজন্য ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সবচেয়ে ভালো মানুষ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ।
‘কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতি শেখ হাসিনা আমাদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে, সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি না আসে, তারপরও আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি থাকবে না।’ যোগ করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। গত মাসে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনয়ন নিয়ে বলেন, আপনাদের কেউ কেউ হয়তো দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। শুধু আপনাদের মুখ দেখে মনোনয়ন দেবো না। আগামী নির্বাচনে যাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে, তাদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রতি ছয় মাস অন্তর করা জরিপের ভিত্তিতে আমরা আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই করছি। তবে যারা দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের বিরোধিতা করবে, তাদের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে কাউকে টেনে তোলার দায়িত্ব আমি নেবো না। আপনাদের নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং নির্বাচনে জিততে হবে। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল পরিহার করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং আগামী নির্বাচনে দলের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।