ইরান ইতালি দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্রুত বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

20

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চীনের বাইরে এশিয়ার আরেক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের দেশ ইতালিতে দ্রুত বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এ ছাড়া চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে ইরানে। ইরানে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত সারাবিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৮০ হাজারের কাছাকাছি। এ ভাইরাসের সংক্রমণে শনিবার আরও ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৬৫। এদের মধ্যে ২৩ জন ছাড়া বাকি সবার মৃত্যু হয়েছে চীনে। খবর বিসিসি, সিনহুয়া, রয়টার্স ও সিএনএনের।
আক্রান্তের দিক দিয়ে চীনের পরই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেশটিতে বর্তমানে ৬০২। এ ছাড়া সংক্রমণে দেশটিতে মোট পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন রবিবার জানায়, দেশটিতে নতুন করে ১৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণে চিকিৎসাধীন দুজন রোগীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে শনিবার ও রবিবার দেশটিতে নতুন করে ৩৯৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হলো।
ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালি ভাইরাস উপদ্রুত এলাকাগুলো অবরুদ্ধ করে ফেলার মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৬৪৮ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৩৯৭ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৯৩৬ জনে। আর ২৯ দেশ ও তিনটি অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৮ হাজার ৭২৪ জন আক্রান্ত হয়েছে।
শুক্রবার চীনে মোট ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে নতুন এ করোনাভাইরাসে, এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ৯৬ জন। তাতে চীনের মূল ভূখণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৪৪২ জনে। মূল ভূখণ্ডের বাইরে আরও আটজনের মৃত্যুতে শনিবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩ জন। তাদের মধ্যে ইরানে আটজন, দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঁচজন, জাপানে তিনজন, হংকং ও ইতালিতে দুজন করে এবং ফিলিপিন্স, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে একজন করে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
এতদিন করোনাভাইরাসের প্রকোপ চীনের মধ্যেই ছিল বেশি। কিন্তু কয়েকদিনে চীনের বাইরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দ্রুত বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা। এ রোগ যাতে অন্যান্য দেশে মহামারী আকার না নেয় সেজন্য এখনই সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানো জরুরী বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। তার মতে, এখনও এই ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে যত সময় যাচ্ছে, সুযোগ ততই কমে আসছে।
ইতালির কডোঙ্গো উহানের মতো ভুতুড়ে শহর : শহরের রাস্তাঘাট সব নিশ্চুপ, মানুষজন নেই বললেই চলে। এ ছাড়া দোকানপাটও সব বন্ধ। কিছু মানুষ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন, তাও নিজেদের ব্যবসা বাঁচাতে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দুজনের মৃত্যু ছাড়াও অর্ধশতাধিক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে উত্তর ইতালির লোদি প্রদেশের ছোট্ট শহর কডোঙ্গোতে। শহরটির স্টেশনের পাশ দিয়ে একাকী হেঁটে যাচ্ছিলেন পাওলা নামের এক নারী। স্থানীয় সময় শনিবার তিনি বলেন, ‘এটা একটা ভুতুড়ে শহর, করোনাভাইরাস আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর এক অবস্থা তৈরি করেছে। মানুষজন তাদের ঘরে ঘরে বন্দী, কোন মানুষ রাস্তায় নেই।’ শহরটির বেশিরভাগ মানুষ শহরের ওই এলাকায় বসবাস করেন। কিন্তু সেখানকার স্টেশন বন্ধ। কেউ টিকেট বিক্রি করছে না। আর কোন যাত্রীও ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে নেই। শুক্রবার ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতালিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে এক নাগরিকের মৃত্যু হয়। শনিবার মারা যায় আরেকজন। ইতালির লোম্বার্ডি অঞ্চলের শহর কডোঙ্গোকে দেশটিতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিস্তারের উৎপত্তিস্থল হিসেবে দাবি করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।