কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্যাসিনোকাণ্ডে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলায় চার্জশীট দিয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে খালেদের দুই ভাইও রয়েছেন। অভিযুক্ত আসামিরা হচ্ছেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, তার ভাই মাসুদ মাহমুদ ভূঁইয়া, হাসান মাহমুদ ভূঁইয়া, হারুন রশিদ, শাহাদৎ হোসেন উজ্জ্বল ও মোহাম্মদউল্লাহ খান।
রবিবার সকালে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, খালেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে অবৈধ আয়ের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। এজন্য আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়া হয়েছে। তদন্তে আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ভ্রমণ বৃত্তান্ত ও পাসপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি পাসপোর্টে কোন বিদেশী মুদ্রা এন্ডোর্সমেন্ট ছাড়াই বহুবার বিদেশে গেছেন। বিদেশে যাওয়ার সময় নগদ বিদেশী মুদ্রা পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতেন। আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার (পাসপোর্ট নম্বর বিএম-০২৮৯২৮১-এর ৩১ পৃষ্ঠায়) মালয়েশিয়ার ভিসা নম্বর-পিই০৫১১১৬৪ লেখা আছে, ইস্যুর তারিখ ১৮ সালের ৪ মে। মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা আছে ’২১ সালের ৩ মে। ভিসায় এমওআইএস এমওয়াই-২ হোম লেখা আছে, যা ‘সেকেন্ড হোম ভিসা’ নামে পরিচিত। এই ভিসা নেয়ার শর্ত হিসেবে মালয়েশিয়ার আরএইচবি ব্যাংকে ৩ লাখ রিঙ্গিত এফডিআর করা আছে, যা নিয়মবহির্ভূতপন্থায় তিনি মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন। আসামির কাছ থেকে জব্দ বিদেশী ব্যাংকের ডেবিট কার্ডের মধ্যে আরএইচবি ব্যাংকের ডেবিট কার্ডও রয়েছে।
সিআইডির অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে, সিঙ্গাপুর সিটির জুরাং ইস্ট এলাকায় মেসার্স অর্পণ ট্রেডার্স প্রাঃ লিঃ নামে খালেদের একটি কোম্পানি আছে। ওই কোম্পানির মূলধনও বেআইনী হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন। খালেদ ও তার কোম্পানির নামে ব্যাংক হিসাব থাকার প্রমাণ হিসেবে ইউওবি ব্যাংকের ডেবিট কার্ডও জব্দ করা হয়েছে। তার নামে থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক ব্যাংকে একটি এ্যাকাউন্টে ২০ লাখ টাকার সমপরিমাণ থাই বাথ জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। আসামির কাছ থেকে ব্যাঙ্কক ব্যাংকের আরও দুটি ডেবিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। সহযোগী আসামি মোহাম্মদউল্লাহ তার নির্দেশে বিদেশী মুদ্রা কেনেন। মোহাম্মদউল্লাহ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, আসামি মোহাম্মদউল্লাহ ’১২ সাল থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার মালিকানাধীন ভূঁইয়া এ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপার লিঃ মেসার্স অর্পণ প্রোপার্টিজ ও অর্ক বিল্ডার্স নামে তিনটি ফার্মের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি খালেদের নির্দেশে তার অপরাধলব্ধ আয় গ্রহণ করে খালেদের ভাই মাসুদ মাহমুদ ভূঁইয়ায় সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকে অপরাধের টাকা জমা দিতেন। আসামি মোহাম্মদউল্লাহর বিরুদ্ধে খালেদের অপরাধের আয় গ্রহণ, ব্যাংকে জমা ও পাচারের জন্য অবৈধ বিদেশী মুদ্রা কেনার মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ে সহায়তা করার অপরাধ প্রাথমিক পর্যায়ে প্রমাণ হয়েছে। অন্য আসামিদের বিরুদ্ধেও খালেদকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নামে বর্তমানে পাঁচটি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অভিযোগ আরও অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রা রাখার অপরাধে ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশনস এ্যাক্ট-১৯৪৭’-এ মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গুলশানের একটি বাড়ি থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর র্যাব বাদী হয়ে খালেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং আইনে গুলশান ও মতিঝিল থানায় চারটি মামলা দায়ের করে।