করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২৫ ॥ এখনও মহামারী রূপ নেয়নি- ডব্লিউএইচও

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে চীনে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চীনেই মারা গেছে ৪২৩ জন। এছাড়া হংকংয়ে একজন এবং ফিলিপিন্সে একজন মারা যান এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। এর আগে সোমবার ৩৬১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। নতুন করে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। বিশ্বের ২৬ দেশের ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫ জন, জাপানে ২০, ভিয়েতনামে ১০, থাইল্যান্ডে ১৯, মালয়েশিয়া ১০, সিঙ্গাপুরে ১৮, ভারতে তিন, শ্রীলঙ্কায় এক, নেপালে এক, রাশিয়ায় দুই, ফ্রান্সে ছয়, বেলজিয়ামে এক, জার্মানিতে ১২, যুক্তরাজ্যে দুই, অস্ট্রেলিয়ায় ১২, ফিনল্যান্ডে এক, তাইওয়ানে ১০, হংকংয়ে ১৭, কম্বোডিয়া এক, ইতালিতে দুই, ফিলিপিন্সে দুই, স্পেনে এক ও ম্যাকাউয়ে ১০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। খবর বিবিসি, সিএনএন ও গার্ডিয়ানের। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখনও মহামারী রূপ নেয়নি। ডব্লিউএইচওর গ্লোবাল ইনফেকশাস হ্যাজার্ড প্রিপেয়ার্ডনেস (বৈশ্বিক সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবেলা) প্রধান সিলভি ব্রায়ান্ড এ ভাইরাস বিষয়ে গুজব প্রতিরোধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মঙ্গলবার চীনের হুবেই প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন করে সেখানে আরও ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে সেখানে আরও দুই হাজার ৩৪৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের জরুরী ভিত্তিতে মাস্ক, প্রটেক্টিভ স্যুট ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী প্রয়োজন।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। মহামারীর আশঙ্কায় বিশ্বের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই চীন থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান।
হংকংয়ে একজনের মৃত্যু : করোনা ভাইরাসে এবার হংকংয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ওই ব্যক্তি গত জানুয়ারিতে চীনের উহান শহরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে দুজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। এর আগে ফিলিপিন্সে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৪৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি চীনের নাগরিক। তিনি উহান শহর থেকে ফিলিপিন্সে গিয়েছিলেন। এরপর সেখানেই মারা গেছেন। অপরদিকে আরও ২৫ দেশে কমপক্ষে ১৫১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হংকংয়ে এখন পর্যন্ত ১৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
বেলজিয়ামে ‘সুস্থ’ ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস : মঙ্গলবার ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। তিনি সম্প্রতি উহান থেকে ফেরা নয় জনের মধ্যে একজন বলে জানিয়েছে বেলজিয়ামের জনস্বাস্থ্য বিভাগ। গত রবিবার উহান থেকে ফেরা নয়জনকে ব্রাসেলসের একটি সামরিক হাসপাতালে পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে একজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ রয়েছেন বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন পর্যন্ত তার শরীরে কোন ধরনের অসুস্থতার লক্ষণ নেই।
চীনে অবহেলায় প্রতিবন্ধী কিশোরের মৃত্যু : চীনের হুবেই প্রদেশে নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে পৃথক করে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখার পর দেখভালের অভাবে তার কিশোর প্রতিবন্ধী সন্তানের মৃত্যু ঘটেছে। এ ঘটনা নিয়ে তদন্তের পর হোনগান কাউন্টি কর্তৃপক্ষ স্থানীয় দুই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। মঙ্গলবার ১৬ বছর বয়সী ইয়ান চেংয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধিতা ছিল। সে কথা বলতে, হাঁটতে বা নিজে নিজে খেতেও পারত না।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বাবা ও ভাইকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার এক সপ্তাহ পর চেংয়ের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার বাবার শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। মা হারা চেংয়ের দেখভাল বাবাই করতেন। বাবাকে পৃথক করার পর তাকে খাওয়ানোর বা দৈনন্দিন জীবনে তাকে সাহায্য করার কেউ ছিল না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী এ কিশোর মাত্র দুইবার খেতে পেয়েছিল বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। মর্মান্তিক এ কাহিনী চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের শোকাচ্ছন্ন করে রেখেছে। এ ঘটনায় তাদের ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য’ স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও হুজিয়াহ শহরের মেয়রকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী এ কিশোরের পরিবার চীনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা।