উন্নয়ন কাজে সঠিক ব্যয় হোক

25

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেশের অভ্যন্তরে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতু। সেতুর একটি বড় অংশ এখন দৃশ্যমান। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রাবন্দর, রাজধানী ঢাকায় মেট্রো রেল চালু হলে দেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি যে পাল্টে যাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতি বিদেশি সাহায্যনির্ভর। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা ছাড়া কোনোভাবেই বাংলাদেশে উন্নয়ন সম্ভব নয়। অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগীরাও বাংলাদেশকে সহায়তা করার ব্যাপারে উদারহস্ত। এই উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়েই গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে আসন্ন অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তথা দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম-২০২০। আলোচ্য সম্মেলনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকার খাত, যেমন মানসম্মত শিক্ষা, অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবা, জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, উদ্ভাবনী অর্থায়ন, গ্রামীণ রূপান্তর ও টেকসই নগরায়ণ ও বাণিজ্য সহজীকরণের ওপর সরকারের মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে তুলে ধরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরে এক কোটি পাঁচ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। বেসরকারি বিনিয়োগ কিছুটা নিম্নপর্যায়ে হলেও এটি বাড়াতে নানা উদ্যোগ ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপক উদ্যোগ আছে। উন্নয়ন সহযোগীদের জানানো হয়েছে, দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে নানা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে কেউ লোকসান করবে না। এ সুযোগ তাদের গ্রহণ করা উচিত। দুই দিনের সম্মেলনে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোট ৪২৫ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। অর্থমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিডিএফ সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) থেকে; ২৭০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ২২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি মিলেছে সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) থেকে ১২০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৩৫ কোটি ডলারের বা দুই হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। তিনি আরো জানিয়েছেন, এবারের সম্মেলনে নীতি কৌশলের পাশাপাশি অংশীদারি ও সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের জন্য ঋণের শর্ত শিথিলের বিষয়টিও জোর দেওয়া হয়েছে।
বিদেশিদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া যাবে। কিন্তু এই অর্থ ব্যবহারে আমাদের কুশলী হতে হবে। অপচয় রোধ করে সঠিক উন্নয়নকাজে ব্যয় করতে হবে।