খবরটি মোটেও সুখকর নয়। বরং দেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। বিশেষজ্ঞরাও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে বছরে হুন্ডির মাধ্যমে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠাতেও অনেকে হুন্ডির আশ্রয় নিচ্ছে। হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা বিদেশে যাওয়ায় সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সূত্রের খবর, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক চক্র হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত তদন্তে সহস্রাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার এবং দেশে অর্থ আনার তথ্য আছে বলে জানা গেছে। এসব ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আড়ালে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। প্রাথমিক তালিকা পেয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড ১৭২ ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত শুরু করলেও বেশিদূর এগোতে পারেনি। অর্থপাচারের ঘটনায় দুই শতাধিক মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। এর মধ্যে বেশ কিছু মামলায় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, আমদানিকারক, মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু পাচারকারীরা রয়েছে। এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাই, হংকং, সিঙ্গাপুর, চীন, তাইওয়ান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও ভারতে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার বেশি হচ্ছে। আবার বিদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের নামে বছরে ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ। কয়েক দিন আগে সংবাদমাধ্যমে আসা আরেকটি খবর হয়, কানাডার বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও আমলাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন সে দেশে আগে থেকেই বসবাসকারী বাংলাদেশি কমিউনিটির আলোচনার বিষয়। এই ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ ঋণখেলাপি। এর বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও কানাডার অনেক শহরে বাড়ি আছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অবৈধভাবে কানাডায় টাকা পাচার করে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলাদের বিরুদ্ধে সেখানে মানববন্ধন হয়েছে।
যারা টাকা পাচার করে বিদেশে সম্পদ অর্জন করেছে, তারা দেশের শত্রু। আইনবিরোধী কাজ করেছে তারা। তাদের সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সম্যক জ্ঞাত। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধা কোথায়। কানাডা বা অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা দরকার।