কাজিরবাজার ডেস্ক :
চীনের উহান শহরে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়া করোনা ভাইসরাসটি এখন পুরো বিশ্বের আতঙ্ক। চীনে গত বছরের শেষে মানবদেহে সংক্রমিত নতুন ভাইরাসটির পুরো নাম ২০১৯- নভেল করো নাভাইরাস। যা সংক্ষেপে ২০১৯-এনসিওভি নামেও পরিচিত। এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস।
আগামী এক সপ্তাহে এই ভাইরাসে সংক্রামিতের সংখ্যা সর্বোচ্চ সংখ্যায় পৌঁছাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভাইরাসটির জিন মানচিত্র পাওয়া গেলেও প্রতিষেধক তৈরিতে নিশ্চিত সাফল্য পাননি বিজ্ঞানীরা।
চিকিৎসাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকি দ্য ল্যানসেট সম্প্রতি উহানে একটি জরিপ চালায়। উহানে ২ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ৪১ জনের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। এতে উঠে এসেছে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য।
গবেষণা বলছে, নভেল করনা ভাইরাসে আক্রান্তের ৭৩ ভাগই পুরুষ। ৩০ জন পুরুষের মধ্যে ১১ জনকেই ভর্তি করতে হয়েছে আইসিইউতে। ১১ নারীর মধ্যে মাত্র দুই জনকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
গবেষণা দেখানো হয়েছে, পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার হার যেমন বেশি, তেমনি নারীর তুলনায় পুরুষের শারীরিক জটিলতাও অনেক মারাত্মক।
ভাইরাস আক্রান্তদের ৪৯ ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। ৩৪ ভাগ আক্রান্তের বয়স ৫০ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। ৬৫ বছরের ওপরে ছিলেন ৬ জন, আর ১৮ থেকে ২৪ বছরের বয়সসীমায় আক্রান্ত মাত্র ১ জন। এই ৪১ জনের মধ্যে কোনও শিশু-কিশোর ছিল না।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৩২ ভাগ আগে থেকে অন্য কোনও জটিল রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে ভুগছিলেন। এর মধ্যে ক্রনিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন ৩২ শতাংশ, ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন ২০ শতাংশ মানুষ। উচ্চ রক্তচাপ ১৫ শতাংশ, হৃদরোগ ১৫ শতাংশ এবং অন্যান্য জটিল রোগ ছিল ১৮ শতাংশ মানুষের।
আক্রান্তের মধ্যে ৪০ জনের (৯৮ শতাংশ) মৃদু থেকে তীব্র জ্বর ছিল। কফ ৭৬ শতাংশ, শ্বাসকষ্ট ৫৫ শতাংশ, পেশীর ব্যথা ৪৪ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ মানুষের মুখে বেশি থুথু তৈরি হচ্ছিল। ৮ শতাংশ আক্রান্তের মাথাব্যথা, হিমোপটাইসিস ৫ শতাংশ এবং ডায়রিয়ায় ভুগেছেন ৩ শতাংশ মানুষ।
শ্বাসকষ্টে ভোগা ২২ রোগীর ১২ জনকেই ভর্তি করা হয় আইসিইউতে। বুকে কফ জমা ৩১ জনের মধ্যে আইসিইউতে ছিলেন ১১ জন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৪১ জনের মধ্যে ৪০ জনেরই জ্বর ছিল। এর মধ্যে ১ জনের (২ শতাংশ) জ্বরের মাত্রা ছিল ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ৮ জনের (২০ শতাশ) ৯৯ থেকে ১০০ ডিগ্রি, ১৮ জনের (৪৪ শতাংশ) ১০২ ডিগ্রি এবং ১৪ জনের (৩৪ শতাংশ ) ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে জ্বর ছিল। আক্রান্তদের সবাই নিউমোনিয়ায় নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে সিটি স্ক্যানে সবার বুকেই অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে।
যে ৪১ আক্রান্তের ওপর গবেষণা চালানো হয়, তাদের মধ্যে ১৫ ভাগ রোগী শেষ পর্যন্ত মারা গেছেন।