বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
২০১৮ সালে হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছিল। কিন্তু সে অনুপাতে হাসপাতালটিতে বাড়েনি সেবার মান। বরং তা নেমেছে তলানিতে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
এতে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই অবস্থা মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। অথচ ২০১৯ সালে হাসপাতালাটি দেশসেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা সাধারণ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রায় তিন বছর আগে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল। বরং ৩১ শয্যায়ই রয়েছে ব্যাপক জনবল সংকট।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি এবং জাতীয় সংসদের হুইপ বর্তমান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি ৫০ শয্যার বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু ৫০ শয্যা অনুযায়ী যে জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা তা এখনও দেওয়া হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি চলছে ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে। অথচ ৩১ শয্যার জনবলের মধ্যে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) পদটি ১৫ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। এতে রোগিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে সুবিধা পাচ্ছেন না। টেকনোলজিস্টের অভাবে ৩ বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে এক্সরে মেশিন। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (ল্যাব) দুটি পদের একটি শূন্য। একটি পদের কর্মরত টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ডেপুটেশনে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে থাকায় এই বিভাগটি বন্ধ আছে প্রায় ৩ বছর ধরে। এতে সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের ছুটতে হয় বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারে।
অন্যদিকে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদটি শূন্য আছে। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের (স্যাকমো) ১৩টি পদের মধ্যে ৮টি পদ শূন্য, নার্সের ১৪টি পদের মধ্যে ৪টি শূন্য, নার্সিং সুপারভাইজারের ২টি পদের মধ্যে ১টি শূন্য, মিডওয়াইফের ৫টি পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৭টি পদের মধ্যে ৬টি পদ শূন্য, স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ২টি পদের দুটিই শূন্য, অফিস সহকারীর ৩টি পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য, ক্লিনারের ৫টি পদের মধ্যে ৪টি পদ শূন্য, নিরাপত্তা প্রহরীর ২টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে আসেন। সীমিত এই জনবল নিয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে জনবলের ঘাটতি পূরণ হলে উপজেলাবাসীকে আরও ভালোমানের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, হাসপাতালে আমরা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না। যার কারণে আমাদের জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা সিলেট ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। সামান্য কাঁটাছেঁড়া নিয়ে কেউ হাসপাতালে এলে তাকে চিকিৎসকরা ওসমানী হাসাপালে রেফার করেন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবা সেরকম বাড়েনি।
বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদীপ বিশ্বাস বলেন, ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই ৫০ শয্যার কার্যক্রম চলছে। ৩১ শয্যার জনবলেও বেশ কিছু পদ শূন্য আছে। এই সীমিত জনবল নিয়েও আমরা সাধ্যমতো জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। জনবল নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জনবল বাড়লে স্বাস্থ্য সেবার মান আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।