আল-হেলাল, সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের একটি অংশ আগামী ৭ ফেব্র“য়ারী দলের জেলা সম্মেলন হবে একথা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করলেও অন্য একটি অংশ ৭ ফেব্র“য়ারি সম্মেলন হচ্ছে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ফেব্র“য়ারীর ৭ তারিখ সম্মেলন হচ্ছেনা যারা বলছেন, তাদের মধ্যে আছেন সুনামগঞ্জ জেলার সকল সাংসদ। তারা ইতিমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, নবগঠিত দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা ও মধ্যনগরসহ ১২টি থানা ও ৪টি পৌরসভাসহ ১৬টি সাংগঠনিক ইঊনিটের মাঝে ১০ টিতেই সম্মেলন হয়নি। মাত্র ৬টিতে সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলন না করে ৬টি ইউনিটিতে অগণতান্ত্রিক কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ১০ টিতে কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এভাবে অসম্পূর্ণ ও অগণতান্ত্রিক কমিটি নিয়ে জেলা সম্মেলন করা যেতে পারে না। গত বুধবার সংসদ সদস্যরা সংসদ লবিতে সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে দেখা করে জেলা নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সৈয়দ আশরাফ সুনামগঞ্জের জেলা নেতৃবৃন্দকে সম্মেলনের তারিখ পেছানোর কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে সম্মেলন পেছানোর নির্দেশ পাওয়ার পর জেলার তিন নেতা শনিবার দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেছেন বলে দাবী করছেন। দলীয় নেত্রীর সাথে সাক্ষাতকারী তিন নেতার একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট বলেন,‘‘দলীয় সভানেত্রীকে আমরা বলেছি, সম্মেলনের পোষ্টার, চিঠি সবই প্রস্তুত করা হয়েছে, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এ অবস্থায় সংসদ সদস্যগণ সম্মেলন করতে অহেতুক বাধা সৃষ্টি করছেন।
আরেক নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘গণভবনে গিয়ে সভানেত্রীকে বলেছি, ‘নেত্রী আপনার সিদ্ধান্তে সবকিছু করেছি, এখন সংসদ সদস্যরা বাধা দিচ্ছেন, পরে আমরা বলি আপনি যেভাবে কাজ করার কথা বলেছেন, সেভাবেই সকল কাজ করেছি, এরপরও শেষ মুহূর্তে সংসদ সদস্যরা বাধা দিচ্ছেন, নেত্রী পরে বলেছেন, সম্মেলন ৭ ফেব্র“য়ারিতেই হবে’।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎকৃত নেতারা বলেন, নেত্রী আগামী ৭ ফেব্র“য়ারী জেলা সম্মেলন করার তাগাদা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদককে তিনি ৭ ফেব্র“য়ারী সুনামগঞ্জ জেলা সম্মেলন করার নির্দেশ দেবেন বলে তাদেরকে বলেছেন বলে জেলার এই তিন নেতা দাবী করেন।
এ দিকে জেলা সম্মেলন নিয়ে জেলার সকল সাংসদ ও জেলা নেতাদের রশি টানাটানিতে তৃনমূল নেতাকর্মীরা হতাশ। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদককে ডিঙ্গিয়ে জেলা নেতৃবৃন্দের সরাসরি সভাপতির সাথে সাক্ষাৎ করাটাকে অনেকে ভাল চোখে দেখছেন না। তারা এটাকে ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়া হিসাবে দেখছেন। সাংসদদের বিরুদ্ধে নেত্রীর কাছে অভিযোগ করাটা ঠিক হয়নি বলেও অনেকে মনে করছেন। এটাকে সাংসদরা তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু হিসাবে দেখতে পারেন। এতে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা বেশী। অপর দিকে দেশের রাজনৈতিক অস্থিশীল পরিবেশে সম্মেলন করার পরিবেশ নিয়েও অনেকে শংকিত।
উল্লেখ্য যে, দেড় যুগ আগে ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে সর্বশেষ সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। নানান কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর জেলা সম্মেলন হয়নি। শেষ সম্মেলনে গঠিত ৫১ সদস্যের জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন মরহুম আব্দুজ জহুর। এর মধ্যে এই কমিটির সভাপতি সহ ১০ নেতা ইতিপূর্বে মারা গেছেন। যারা মারা গেছেন তারা হলেন- মরহুম গোলাম রব্বানী, জিল্লুর রহমান, অনিল কুমার দাস, পিলু চৌধুরী, মনোয়ার বখত নেক, হারুন অর রশিদ, নুরুল ইসলাম সর্দার, নুরুল হুদা ও আপ্তির মিয়া। দল ছেড়েছেন দিরাই উপজেলার কদ্দুস মিয়া। দেশের বাইরে আছেন সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ ওমকার নাথ রায়,সদস্য তোফায়েল আহমদ চৌধুরী ও জসিম উদ্দিন ফারুক। বাকী ৩৬ সদস্যের বেশির ভাগেই নিষ্ক্রিয়। এই অবস্থায় কয়েকবারই দলীয় হাইকমান্ড থেকে কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। এবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে জেলার ৬ উপজেলায় সম্মেলন শেষ হয়েছে এবং ১ টিতে কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। জেলার জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও কমিটি ঘোষণা হয়নি এখনো (রবিবার পর্যন্ত)। জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ প্রথম দফায় গত ২৭ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেন। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঐ সময় যুক্তরাজ্যে থাকায় সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে ৭ ফেব্র“য়ারি করা হয়। জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, সম্মেলনের স্বার্থেই ৭ ফেব্র“য়ারী জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটি গঠনে আমরা বদ্ধপরিকর। তবে আগামীকাল আমি ঢাকায় অবস্থান নিয়ে দলের সুপ্রীম অথরীটির সাথে আলাপ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটি নিয়ে স্বয়ং কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত বিব্রত। বারবার তারিখ নির্ধারণ করেও আমরা সম্মেলন সম্পন্ন করতে পারছি না। এবার পেছানোর কোন সুযোগ নেই। নির্ধারিত ৭ তারিখে সম্মেলন হলে ছাতক দোয়ারবাজারসহ যেসব থানা কমিটির সম্মেলন আদৌও হয়নি সেসকল কমিটির সম্মেলনও এর আগে যেকোন উপায়ে সম্পন্ন করতে আমরা পিছপা হবো না। এবং এবারের কমিটিতে ত্যাগী বঞ্চিত পরূক্ষিত ছাত্রলীগ যুবলীগ কৃষকলীগ মুক্তিযোদ্ধা ও নারী নেতৃত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গ্রহনযোগ্য কমিটি গঠন করবো। দীর্ঘদিন পর সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট যে কার্যকরী কমিটি গঠন করা হবে সেটি হবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন নেতৃত্বের একটি গণতান্ত্রিক কমিটি।