হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী
(পূর্ব প্রকাশের পর)
জাহান্নামের সৃষ্টি সম্পর্কে বিরোধীদের যুক্তি ও তার জবাব
যুক্তি : যদি বর্তমানে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তা (জান্নাত ও জাহান্নাম) এবং তার অধিবাসীরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলার বাণী- তাঁর (আল্লাহ) সত্ত্বা ছাড়া সকল বস্তুই ধ্বংসশীল। {সূরা কাছাছ: ৮৮} প্রত্যেক জীবকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। {সূরা আলে-ইমরান: ৮৫} সুতরাং প্রত্যেক জিনিস যেহেতু ধ্বংস হবে, তাই পূর্বে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হলে তা অনর্থক হয়ে যায়। আর আল্লাহ তা‘আলা অনর্থক কোন কাজ করেন না।
জবাব : আল্লাহ তা‘আলা যে সকল বস্তু সৃষ্টি করে তার ধ্বংস লিপিবদ্ধ করেছেন ক্বিয়ামতের দিন সে সকল বস্তু অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু জান্নাত ও জাহান্নামকে আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংস করার জন্য সৃষ্টি করেননি। অনুরূপভাবে আল্লাহ্র আরশ যা জান্নাতের ছাদ হিসাবে থাকবে*৬* তাও ধ্বংস হবে না।*৭*
জাহান্নামের অবস্থান : ওলামায়ে আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আত ঐক্যমত পোষণ করেন যে, বর্তমানে জাহান্নাম সৃষ্ট অবস্থায় বিদ্যমান, পূর্বের পর্বে উল্লেখিত দলীল সমূহ যার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। কিন্তু বর্তমান অবস্থান নিয়ে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়, যা পর্যালোচনা করলে তিনটি মত পাওয়া যায়। প্রথম মত : বর্তমানে জাহান্নাম মাটির নীচে অবস্থিত। দ্বিতীয় মত : বর্তমানে তা আসমানে অবস্থিত। তৃতীয় মত : জাহান্নামের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত যা মানুষের জ্ঞানের বাইরে। আর এই মতটিই ছহীহ। কারণ, জাহান্নামের অবস্থান সম্পর্কে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে কোন দলীল পাওয়া যায় না।
হাফেয সুয়ূতী (রহ.) বলেন, জাহান্নামের বর্তমান অবস্থান আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। আর আমার নিকটে এমন কোন অকাট্য দলীল নাই যার উপর ভিত্তি করে জাহান্নামের অবস্থান নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।*৮*
শায়খ অলিউল্লাহ দেহলভী (রহ.) বলেন, জান্নাত ও জাহান্নামের নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে কোন স্পষ্ট দলীল নাই। বরং তা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি ও বিশ্বজগৎ আমাদের আয়ত্তের বাইরে।*৯* আল্লামা ছিদ্দীক হাসান খান এই মতটিকেই ছহীহ মত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
হাশরের দিনের ভয়াবহ অবস্থা :
হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, কাফিরদেরকে হাশরের মাঠে মুখের মাধ্যমে হাঁটিয়ে উপস্থিত করা হবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! মুখের ভরে কাফিরদেরকে কিভাবে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে? তিনি বললেন, দুনিয়াতে যে সত্তা দু’পায়ের উপর হাঁটান, তিনি কি ক্বিয়ামতের দিন মুখের ভরে হাঁটাতে পারবেন না? তখন কাতাদাহ (রা.) বললেন, আমাদের প্রতিপালকের ইয্যতের কসম! অবশ্যই পারবেন।*১০*
অন্য হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষকে হাশরের মাঠে উঠানো হবে শূন্য পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাৎনা বিহীন অবস্থায়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সা.)! তখন তাহলে পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের দিকে তাকাবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আয়েশা! এরকম ইচ্ছে করার চেয়ে তখনকার অবস্থা হবে অতীব সংকটময়। (কাজেই কি করে একে অপরের দিকে তাকাবে)।*১১*
জাহান্নামের স্তর :
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের পাপ অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করার জন্য জাহান্নামের বিভিন্ন স্তর এবং স্তরভেদে তাপের তারতম্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন- তিনি মুনাফিকদের স্তর উল্লেখ করে বলেছেন, ‘মুনাফিকগণ জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে’ {সূরা নিসা: ১৪৫}।
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘প্রত্যেকে যা করে তদনুসারে তার স্থান রয়েছে।’ {সূরা আনআম: ১৩২}
তিনি অন্যত্র বলেন, যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছে সেকি তার মত যে আল্লাহ্র ক্রোধ নিয়ে ফিরে এসেছে? আর তার আশ্রয়স্থল জাহান্নাম এবং তা কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল। তারা আল্লাহ্র নিকট বিভিন্ন মর্যাদার। আর তারা যা করে, আল্লাহ তার ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন।’ {সূরা আলে-ইমরান: ১৬২-১৬৩}।
জাহান্নামের দরজা সমূহ :
জাহান্নামের দরজা মোট সাতটি যা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান, উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে’ {সূরা হিজির: ৪৩-৪৪}।
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে কাছীর (রহ.) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন, জাহান্নামের প্রত্যেক দরজায় শয়তান ইবলীসের অনুসারীদের কিছু অংশের প্রবেশের কথা লিখা আছে, তারা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, পালানোর কোন পথ থাকবে না।*১২*
প্রত্যেক জাহান্নামী তাদের আমল অনুযায়ী জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং তার নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে। আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জাহান্নামের সাতটি দরজা আছে যা পর্যায়ক্রমে একটি অপরটির উপর অবস্থিত, সর্বপ্রথম প্রথমটি, অতঃপর দ্বিতীয়টি, অতঃপর তৃতীয়টি পূর্ণ হবে, অনরূপভাবে সবগুলো দরজাই পূর্ণ হবে’।*১৩*
এখানে দরজা বলতে স্তরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে যা একটি অপরটির উপর অবস্থিত এবং তা পর্যায়ক্রমে পূর্ণ হবে।
যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের নিকটে নিয়ে আসা হবে তখন তার দরজা সমূহ খুলে দেয়া হবে, অতঃপর তারা চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সেখানে প্রবেশ করবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যখন তারা জাহান্নামের নিকটে উপস্থিত হবে তখন ইহার প্রবেশদ্বারগুলি খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকটে কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূল আসেনি যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত তেলাওয়াত করত এবং এই দিনের সাক্ষাত সম্বন্ধে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তখন তারা বলবে অবশ্যই এসেছিল। বস্তুত কাফিরদের প্রতি শাস্তির কথা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে’ {সূরা যুমার: ৭১}।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে লক্ষ করে বলবেন, ‘জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল।’ {সূরা যুমার: ৭২}।
জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের পর তার দরজাসমূহ এমনভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে যা হতে বের হওয়ার কোন অবকাশ থাকবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে, তারাই হতভাগ্য। তারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ অগ্নিতে’ {সূরা বালাদ: ১৯-২০}।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও তা বার বার গণনা করে, সে ধারণা করে যে, তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে, কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়, তুমি কি জান হুতামা কি? ইহা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে, নিশ্চয়ই ইহা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে’ {সূরা হুমাযাহ্: ১-৯}।
জাহান্নামের প্রহরী : মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণকে জাহান্নামের প্রহরী নিযুক্ত করেছেন যারা আল্লাহর আদেশ পালনে সদা প্রস্তুত থাকে, কখনোই তা অমান্য করে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘হে মু’মিনগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ তাঁদেরকে যা আদেশ করেন তা পালনে। আর তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই পালন করে’ {সূরা আত-তাহরীম: ৬}।
আর জাহান্নামের প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত ফেরেশতাগণের সংখ্যা ১৯ জন। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: ‘আমি তাদেরকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ। তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিত অবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না। ইহা গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে। সাকার-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে উনিশজন প্রহরী’ {সূরা মুদ্দাছছির: ২৬-৩০}।
আয়াতে উল্লেখিত সংখ্যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। কারণ, তারা ধারণা করে যে, এই অল্প সংখ্যক ফেরেশতার শক্তির সাথে বিপুল পরিমাণ জাহান্নামীদের বিজয়লাভ সম্ভব। কিন্তু তারা জানেনা যে, একজন ফেরেশতার শক্তি দুনিয়ার সকল মানুষের চেয়েও বেশী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি ফেরেশতাগণকে জাহান্নামের প্রহরী নিযুক্ত করেছি, কাফিরদের পরীক্ষাস্বরূপই আমি তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি যাতে কিতাবীদের দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে, বিশ্বাসীদের বিশ্বাস বৃদ্ধি হয় এবং বিশ্বাসীরা ও কিতাবীগণ সন্দেহ পোষণ না করে’ {সূরা মুদ্দাছছির: ৩১}।
জাহান্নামের প্রশস্ততা ও গভীরতা :
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অবাধ্য বান্দাদের শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যার প্রশস্ততা বিশাল এবং গভীরতা অনেক যার প্রমাণ নিম্নরূপ:
১- পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। জাহান্নামীদের সংখ্যার আধিক্য বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এর পরেও আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদেরকে বিশাল আকৃতির দেহ দান করবেন। যেমন- তাদের এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান, এক কাঁধ থেকে অপর কাঁধের দুরুত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের পথ, চামড়া হবে তিন দিনের পথ পরিমান মোটা, যা জাহান্নামীদের দেহ অবয়ব অধ্যায়ে আলোচনা করব ইন্শাআল্লাহ। এতো বিশালাকৃতির হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তা পূর্ণ হবে না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের পাঁ জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে বলবেন: ‘সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? জাহান্নাম বলবে, আরও কিছু আছে কি?’ {সূরা ক্বাফ: ৩০}।
এই উত্তর শুনে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ পাঁ জাহান্নামের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জাহান্নামে অনবরত (জ্বিন-মানুষ) কে নিক্ষেপ করা হবে। তখন জাহান্নাম বলতে থাকবে, আরো অধিক কিছু আছে কি? এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ পাঁ প্রবেশ করাবেন। তখন জাহান্নামের একাংশ অপর অংশের সাথে মিলে যাবে এবং বলবে, তোমার মর্যাদা ও অনুগ্রহের কসম! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।*১৪*
২- জাহান্নামের গভীরতা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে ছিলাম। যখন তিনি একটি শব্দ শুনলেন তখন বললেন, তোমরা কি জান এটা কি? তখন আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটি এক খন্ড পাথর যা জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে ৭০ বছর পূর্বে, এখন পর্যন্ত সে নিচের দিকে অবতরণ করছে জাহান্নামের তলা খুঁজে পাওয়া অবধি। অন্য হাদীছে এসেছে, আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) একদা একটি বড় পাথর খন্ডের দিকে ইশারা করে বলেন যে, যদি এই পাথরটি জাহান্নামের কিনারা দিয়ে তার ভিতরে নিক্ষেপ করা যায়, তবে ৭০ বছরেও সে তলা পাবেনা।*১৫*
৩- জাহান্নাম এতো বিশাল যে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে টেনে আনতে বিপুল পরিমাণ ফেরেশতার প্রয়োজন হবে। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে, যার ৭০ টি লাগাম হবে এবং প্রতিটি লাগামের সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা থাকবে, তাঁরা তা টেনে আনবে।*১৬*
৪- ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর দু’টি বিশাল সৃষ্টি চন্দ্র-সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, যার প্রমাণে বায়হাক্বীতে বর্ণিত হয়েছে: হাসান বাছরী (রহ.) বলেন, আবু হুরায়রাহ (রা.) আমাদেরকে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে দুটি পনিরের আকৃতি বানিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন হাসান বাছরী জিজ্ঞেস করলেন, তাদের অপরাধ কি? জবাবে আবু হুরায়রাহ বললেন, আমি রাসূল (সা.) হতে এ ব্যাপারে যা কিছু শুনেছি, তাই বর্ণনা করলাম, এই কথা শুনে হাসান বাছরী নীরব হয়ে গেলেন।*১৭*
উপরোল্লিখিত দলীল সমূহ থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে, জাহান্নামের বিশালত্ব অকল্পনীয়। কারণ এত বিশালাকৃতির হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন জাহান্নামী এবং পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড় সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পরেও যদি তার পেট পূর্ণ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিজের পাঁ প্রবেশ করানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে তা কত বিশাল হতে পারে তা আমাদের কল্পনার বাইরে। আল্লাহ আমাদের তা হতে রক্ষা করুন। আমীন! (অসমাপ্ত)