কাজিরবাজার ডেস্ক :
সীমান্ত এলাকা জুড়ে নজরদারি ও সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবিকে। সীমান্তবর্তী এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারতের এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে সে দেশে প্রচ- বিক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার জের ধরে বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অস্ত্র চোরাচালান, জঙ্গি যাতায়াত, মাদক পাচার, চোরাচালান ও জালনোট পাচারসহ সীমান্ত এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরামসহ সীমান্ত দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪০৯৬.৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২৮৮০.৫ কিলোমিটার হচ্ছে স্থলসীমান্ত আর বাকি ১১১৬.২ কিলোমিটার হচ্ছে জলসীমা। আন্তর্জাতিক এই সীমান্তটি নদী, বন, কৃষিজমি এবং গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে গিয়েছে। এটি কিছু দুর্গম এলাকা যেমন দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ম্যানগ্রোভ-জলাভূমি এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনভূমি ও পর্বত অতিক্রম করে আছে যার মধ্যে কিছু অংশ স্বাভাবিক সময়েই অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, অস্ত্র, জালনোট, জঙ্গি সংক্রান্ত যাতায়াতের ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় হতাহত ও গ্রেফতার হয়। বর্তমানে ভারতের এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে সে দেশে প্রচ- বিক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার জের ধরে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতের এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইন সিএএ-এর বিরুদ্ধে ভারতে যেভাবে মানুষ ফুঁসে উঠেছে তা ক্রমেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে শুরু করেছে। এ কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, আগরতলাসহ সেভেনসিস্টার অভিহিত সাতটি রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় নজরদারি ও সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে। সীমান্ত এলাকায় যাতে কোন ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অপরাধ সংঘটিত হতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরাসহ বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি অনেক এলাকাতেই বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সীমানা সরলরৈখিক না হওয়ার কারণে মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি সীমানা বরাবর সীমাবদ্ধ রাখা খুবই কঠিন। এ সুযোগ নিয়ে দুই দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাস, জাল টাকার ব্যবসা এবং জঙ্গিবাদের সম্প্রসারণ ঘটছে। ‘বাংলা সিম’ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জাল নোটের ব্যবসায়ী, পাচারকারী, জঙ্গিরাও রয়েছে। মোবাইলের ফ্রিকোয়েন্সির সীমানা বাংলাদেশের সীমানার কত দূর যাবে তা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার মুখে রয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন। দুই দেশের সীমান্ত ব্যবহারে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, পাচারকারী এবং জঙ্গি সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ও ভারতে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় সম্পৃক্ত জঙ্গি ও বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করার পর তাদের হাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সিম পাওয়া গেছে। সীমান্তের ওপারে এদেশের সিম ‘বাংলা সিম’ হিসেবে পরিচিত। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী জানতে পেরেছে, বেনাপোল সীমান্ত থেকে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দূরে বনগাঁ স্টেশনের কাছাকাছি এলাকা থেকেও অনায়াসে বাংলাদেশের সিম ব্যবহার করে কথা বলা যায়। পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার সবখানে পাওয়া যায় বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক। ভারতীয় মোবাইলের নেটওয়ার্কে না থাকায় এ নম্বরগুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশে কার সঙ্গে কথা বলা হয়।