কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারত এখনও উত্তাল। এর ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, কোন বাংলাদেশী যদি অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করে এবং ভারত সরকার যদি বিষয়টি বাংলাদেশকে অবহিত করে, তাহলে আমরা যাচাই-বাছাইর মাধ্যমে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের অবশ্যই বাংলাদেশে ফেরত আনব। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব যে তারা আসলেই আমাদের নাগরিক কিনা। ইংল্যান্ডে যদি বাংলাদেশের নাগরিক অবৈধভাবে থাকে, আর ব্রিটিশ সরকার যদি আমাদের বলে, তাহলে আমরা যাচাই-বাছাই করে নিয়ে আসি। মোমেন মনে করেন, কাজের সন্ধানে বাংলাদেশীরা ভারতে যায় না। কাজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের জন্য ভারত কোন আকর্ষণীয় জায়গা নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়ে বাংলাদেশীরা সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করার কোন তথ্য তার কাছে নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশীরা ভারতে যায়না। ওরা যায় মিডল ইস্টে, আমেরিকায়, ইউরোপে। ভারত তাদের আকর্ষণ না। ভারতে যায় বেড়াতে, প্রায় ১৩-১৪ লক্ষ লোক ওখানে বেড়াতে যায়, বিবিসি বাংলাকে বলেন মোমেন। ভারতে যখন এসব উদ্যোগ নেয়া তখন সেটিকে বাংলাদেশের তরফ থেকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বর্ণনা করা হলেও নরেন্দ্র মোদি সরকারের এসব কাজ বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রায় দুই মাস যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে মানুষ ঢুকছে। এর মধ্যে অন্যতম জায়গা হলো, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত। নবেম্বর মাসের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত ৩৩০ জন বাংলাদেশে এসেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টে বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধরা নির্যাতিত হয়ে যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে তারাও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা পাবে। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না বরং তারা শান্তি এবং সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন ভিন্ন কথা। অমিত শাহের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২০০১ সাল থেকে যে মাইনরিটি পারসিকিউশন এদেশে হয়েছে, এটা কেবলমাত্র একাত্তরের বর্বরতার সঙ্গেই তুলনীয়। কাজেই এখানে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কোন উপায় নেই। নবেম্বর মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সীমান্ত-রক্ষীরা তাদের আটক করে থানায় সোপর্দ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর পুলিশ তাদের আদালতে উপস্থাপন করেছে। স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রহমান বলেন, আদালতে উপস্থাপন করার পর বেশিরভাগ জামিন নিয়ে তাদের আত্মীয়দের সাথে চলে গেছে। ঝিনাইদহ পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যারা বাংলাদেশে এসেছে তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হয়েছে এবং এরা বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে প্রবেশের সময় সীমান্তে ভ্রমণের জন্য তাদের কাছে কোন বৈধ কাগজপত্র ছিলনা সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। যারা জামিন পেয়েছেন তাদের উপর নজরদারি রয়েছে বলে দাবি করেন সে কর্মকর্তা।