উৎপাদন বাড়ায় দেশে কৃষিজাত পণ্যের, বিশেষ করে ধানের উৎপাদন বেড়েছে। এই অবস্থায়ও বাজারে যেসব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে চাল। দৃশ্যত কোনো সংকট না থাকলেও শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলে মিল মালিকরা প্রতিকেজি মিনিকেটে পাঁচ থেকে ছয় টাকা এবং মোটা আটাশ চালের দাম আট থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর আগে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। চূড়ান্ত নৈরাজ্য হয়েছে পেঁয়াজ নিয়ে। ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আমদানি করে বিক্রি করা হয়েছে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। আর চাহিদাও ২৩-২৪ লাখ টনের মতো। প্রতিদিনের ব্যবহার্য এ পণ্যটি এখনো সাধারণের নাগালের মধ্যে আসেনি। এরই মধ্যে গুজব ছড়িয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয় লবণের দামও। অথচ দেশে কমবেশি ১৫ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রেস নোট দেওয়া হলো। বাজার নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় লবণের বাজারে অস্থিরতা কাটতে সময় লাগেনি। চাল, পেঁয়াজ, লবণ নয়—ভোজ্য তেল ও চিনির বাজারও স্বাভাবিক নয়। ভোজ্য তেল, চিনিসহ প্রধান কয়েকটি নিত্যপণ্যের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি। কয়েকটির ক্ষেত্রে পরিমিত আমদানির কারণে বাজারে এসব পণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু তার পরও দামের ক্ষেত্রে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই কাজটি করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। একেক দিন একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারব্যবস্থা ভেঙে ফেলার অপচেষ্টা চলছে। অতীতে একটি অতি মুনাফালোভী অসাধুচক্রের বিরুদ্ধে পণ্যের সংকট তৈরি করে ফায়দা লোটার অভিযোগ ছিল। সে অভিযোগ নতুন করে উঠেছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বাজার ব্যবস্থাপনা ও তদারকি নিয়েও।
বাজারে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়া বা বাড়িয়ে দেওয়া যে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুরো বাজারকে অস্থির করে এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলে বিপুল অঙ্কের মুনাফা করে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে এই চক্রটি। এই চক্রকে চিহ্নিত করাও কঠিন কাজ নয়। কারা উৎপাদক, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও মজুদদার—এটি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জানা থাকার কথা। তারা যদি পুরো বিষয়টির ওপর নিয়মিত নজরদারি করে, তা হলে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আমরা মনে করি।