শাবির প্রশংসনীয় উদ্যোগ

17

সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। কিন্তু তার পরও মাদকের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী সর্বনাশা মাদক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদকের সরবরাহ পথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে শতভাগ সাফল্য দেখাতে পারেনি। দেশের তরুণসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও মাদকের আগ্রাসন থেমে নেই। মাদকমুক্ত সমাজ নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি প্রতিটি পরিবারকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সর্বনাশা মাদক নিয়ন্ত্রণে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে প্রথমবারের মতো ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত কি না তা যাচাই করে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে সেখানে। নবাগত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ মাদকাসক্ত কি না তা জানতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরীক্ষায় কেউ মাদকাসক্ত এমনটি শনাক্ত হলে তাকে ভর্তি করানো হবে। একই সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হবে। এ ছাড়া সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনতে তাকে চিকিৎসার পাশাপাশি কাউন্সেলিং করানো হবে। শুধু নবীন শিক্ষার্থীদের নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সব শিক্ষার্থীর ডোপ টেস্ট করানো হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বছরব্যাপী ডোপ টেস্টের কার্যক্রম চলতে থাকবে। সব বিভাগ ও হলে অভিযান চালিয়ে যেসব ছেলে-মেয়েকে সন্দেহ হবে তাদের ডোপ টেস্ট করানো হবে। এ ছাড়া কোনো শিক্ষককেও মাদকাসক্ত সন্দেহ হলে তাঁকেও ডোপ টেস্ট করানো হবে। পরীক্ষায় কেউ ধরা পড়লে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখানে উচ্চতর গবেষণা হবে, জ্ঞান সাধনা হবে। সভ্যতার মানদণ্ডে উন্নীত ও রুচিশীল মানুষ বেরিয়ে আসবে এখান থেকে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন মাদকের ছড়াছড়ি। গাঁজা, মদ, ইয়াবার কেনাবেচা চলে প্রায় খোলাখুলিভাবেই। এর অনিবার্য ফল হচ্ছে ক্রমেই বেশি সংখ্যায় শিক্ষার্থীর মাদকাসক্ত হয়ে পড়া। নতুন শিক্ষার্থীরা প্রথমে অন্যের দেখাদেখি কৌতূহলবশত কিংবা পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে মাদক সেবন করে, তারপর আসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকাসক্তের না থাকে নৈতিক ভিত্তি, না থাকে যুক্তিবোধ। এরপর মাদকের অর্থ জোগাতে তারা হেন অন্যায় কাজে যাতে জড়িয়ে না পড়ে। তাদের শিক্ষাজীবন লাটে ওঠে। তারা পরিবার ও দেশের জন্য বোঝা হয়ে যায়। এই ধ্বংসের প্রক্রিয়া ঠেকাতেই হবে। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগটি অনুকরণীয় ও প্রশংসনীয়। শাবিপ্রবির এই উদ্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসতে পারে। মাদক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে সবার।