বাজারে ঘুরলে পেঁয়াজ সরবরাহে কোনো ঘাটতি আছে বলে মনে হয় না। অথচ পেঁয়াজের বাজারে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। আমদানি সংকটের অজুহাতে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন। আগুন লাগা বাজারে পেঁয়াজ মধ্যবিত্তের অধরা। এই অস্থিরতার শুরু গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে। তখন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত এবং অস্থির হয়ে ওঠে আমাদের পেঁয়াজের বাজার। বাংলাদেশ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ওপরই নির্ভরশীল। দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়তে থাকে। ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায় দেশি পেঁয়াজের দাম। বাজার তদারকি, টিসিবির ট্রাক সেল ও হুজুগ বন্ধের পর দাম কিছুটা কমলেও কয়েক দিন ধরে আবার লাগামহীন। যদিও সেই অর্থে সংকটের কোনো তথ্য নেই কোথাও।
বাজারে পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও নৈরাজ্যের পেছনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে। বরাবরই যেকোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পর এ ধরনের অভিযোগ করা হয়। কিন্তু এবার সরকারের প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা কমিশনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে একটি সিন্ডিকেট থাকতে পারে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাঁদের মতে, পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ধীরে চলা নীতির সমালোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত সাতটি দেশ থেকে ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। পাঁচ হাজার টন বন্দর থেকে খালাস করা হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের অগ্নিমূল্য নিয়ে ঝড় উঠেছে জাতীয় সংসদেও। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা। একাদশ সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে তাঁরা বলেছেন, বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি না থাকলেও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হচ্ছে। মিসর ও তুরস্ক থেকে কিছুদিনের মধ্যে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, আমদানি করা পেঁয়াজ জেলায় জেলায় পাঠানো হবে। টিসিবি ট্রাকে করে তা বিক্রি করবে।
কিন্তু সাধারণের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাওয়া পেঁয়াজের বাজারের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরার কৌশল বের করতে হবে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা দুইভাবে খুব দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অতি অস্বাভাবিক বাজারে লাগাম টানতে তাৎক্ষণিক করণীয় হচ্ছে প্রথমত, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বড় শিল্প গ্রুপগুলোর ঘোষিত বড় চালান দ্রুত দেশে পৌঁছানো এবং ছোট আমদানিকারকদের ব্যাংকের ঋণসুবিধা নিশ্চিত করা।
যেকোনো মূল্যে পেঁয়াজের বাজার সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। সেই কৌশলের একটি হতে পারে সরকারের নিজস্ব বিপণনব্যবস্থা জোরদার করা। আমরা আশা করব, পেঁয়াজের বাজারের নৈরাজ্য দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।