বিশ্বনাথে পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে কর্মচারীকে পিটিয়ে জখম, স্ত্রীসহ দোকান মালিক কারাগারে

25
বিশ্বনাথে পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে দোকান মালিকদের মারধরে আহত কর্মচারী ফরহাদ।

জাহাঙ্গীর আরম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
এমনিতেই পেঁয়াজের দাম চড়া। যেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। আর সে পেঁয়াজ যদি দোকান থেকে নিজ কর্মচারী চুরি করেন সেটা মানবেন কেমন করে দোকান মালিক। তেমনি পেঁয়াজ পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে বিশ্বনাথে ফরহাদ মিয়া (২৫) নামের এক মোদি-দোকানের কর্মচারীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত ফরহাদ কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার উছমানপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে সে তার বাবা-মাকে নিয়ে বিশ্বানাথ থানার পার্শ্ববর্তি মানিক মিয়ার কলোনী ভাড়ায় বসবাস করছিল। সোমবার বিকেলে পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে তাকে (ফরহাদকে) হরিকলস গ্রামের বাড়িতে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন দোকান মালিকের ছেলেরা। এ ঘটনায় হরিকলস গ্রামের বাসিন্দা ও বিশ্বনাথ পুরান বাজারের শাহজালাল ষ্টোরের মালিক আব্দুর রউফ (৫৫) ও তার স্ত্রী রহিমা বেগমকে (৪২) গ্রেফতারের পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রী দু’জনকে জেলহাজতে পাঠানো হয় বলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দেবাশীষ শর্ম্মা জানিয়েছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বনাথ পুরান বাজারে আব্দুর রউফের পরিচালিত শাহজালাল ষ্টোরে ৮হাজার টাকা বেতনে দীর্ঘ চার বছর ধরে চাকরি করে আসছে ফরহাদ। তার বাবা আবুল কাশেম বাজারে ঠেলা গাড়ি চালান আর তার মা মনোয়ারা বেগমও বাসায় বাসায় জিয়ের কাজ করেন। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালেও নিজ কর্মস্থল শাহাজালাল ষ্টোরে যান ফরহাদ। দুপুরে দোকানে আসেন আব্দুর রউফের ছেলে এ.কে রাজু ও আব্দুস সালাম। এ সময় পেঁয়াজ ও রসুন আলাদাভাবে ব্যাগে রাখা দেখে ফরহাদকে তারা প্রশ্ন করেন এগুলো কার? এ নিয়ে দোকান মালিকের দুই ছেলে ও কর্মচারী ফরহাদের মধ্যে প্রথমে বাকবিতন্ডা ও পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত ওইদিন সন্ধ্যায় রাজু ও সালাম তাদের সহপাঠিদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি নিয়ে গিয়ে মারধর করেন ফরাহাদকে। ফরহাদের মা মনোয়ারা বেগম থানায় গিয়ে ছেলের জন্য কান্নাকাটি করলে থানার ওসি শামীম মুসা এসআই দোবশীষ শর্ম্মাকে পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।
এ সময় ছেলেদের না পেলেও তাদের বাবা দোকান মালিক আব্দুর রউফ ও তাদের মা রহিমা বেগমকে আটক করেন। পরে সোমবার রাত ১১টায় ফরহাদ বাদী হয়ে দোকান মালিক আব্দুর রউফকে প্রধান আসামি করে ৭ জানের নাম উল্লখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং ৭)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে আহত ফরহাদের মা মনোয়ারা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে থানা পুলিশকে অবগত করে আবারও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার ছেলেকে নিয়ে ভর্তি করেছেন।
দোকান মালিক আব্দুর রউফ ও তার স্ত্রী রহিমা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে ঁেপয়াজ, রসুন ও ক্যাশের টাকা চুরি করে আসছিল ফরহাদ।
বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুসা এ প্রতিবেদককে বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অন্যায় এবং অপরাধও। পেঁয়াজ চুরি করুক আর যাই হোক থানাতো কাছেই ছিল, মারধরের কি প্রয়োজন। তিনি বলেন অপরাধী যত শক্তিশালীই হউন না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ওই মামলায় বাকি আসামিদেরও গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।