জঙ্গিদের দমন করা নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও প্রায়ই জঙ্গি তৎপরতার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ বা ঢাকসু নির্বাচনের আগে নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্রীরের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রায় প্রতিটি দেয়ালে দেখা যেত তাদের পোস্টার। প্রায় প্রকাশ্যেই বিতরণ করা হয়েছে লিফলেট। ইন্টারনেটে তাদের ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে। সরকার, সরকারপ্রধান, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, এমনকি সার্বভৌমত্ববিরোধী বক্তব্যও প্রচার করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো তাদের পোস্টার-লিফলেট ছড়ানো হয়। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় নিয়মিতই তাদের তৎপরতা দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে রমনা, মতিঝিল, ধানমণ্ডি, গুলশান, বনানীসহ বেশ কিছু এলাকা। সারা দেশের অনেক শিক্ষাঙ্গনেই তাদের উপস্থিতি রয়েছে। শুধু হিযবুত তাহ্রীরই নয়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবিসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু হামলার ঘটনাও ঘটেছে। কিছু কিছু জঙ্গিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
উপমহাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারের নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের আলামত পাওয়া যাচ্ছে। ভারতে নানা ক্ষেত্রের খ্যাতিমানদের নিয়ে জঙ্গিদের হিট লিস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। পাকিস্তান এখনো জঙ্গিবাদের ব্রিডিং গ্রাউন্ড হিসেবে চিহ্নিত। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদ বিস্তারের অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ রয়েছে।
জানা যায়, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোও নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ভোলার মতো আরো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করা হতে পারে। প্রকাশ্যে ততটা না হলেও গোপনে তারা যথেষ্ট সক্রিয় আছে এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। অনেকের মতে, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদেরও তারা ব্যবহার করতে চায়। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এনজিও ও সেবামূলক বিভিন্ন সংস্থার ছদ্মাবরণে বিভিন্ন সময় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ নিকট অতীতে জঙ্গি-সন্ত্রাসের ভয়াবহ রূপ প্রত্যক্ষ করেছে। এ দেশের মানুষ তেমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। তাই রাষ্ট্রকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করতে হবে। ধর্মান্ধদের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান বন্ধ করতে হবে এবং তাদের গতিবিধি কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। জঙ্গি সংগঠনগুলো কোনোভাবেই যেন মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে বিভ্রান্ত করতে না পারে, সেই দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে হিযবুতের প্রায় প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড গোয়েন্দা নজরদারির দুর্বলতাই তুলে ধরে। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে।