দুর্নীতি রোধ এবং রাজনীতি স্বচ্ছ করতে দলীয় পরিমণ্ডলে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছিল। আপাতত ‘রাজনৈতিক’ অভিযান হলেও এটি চালিত হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়। এখন জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা, অভিযান আরো সংহত ও বিস্তৃত হোক। সেটিও হতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের চার সংসদ সদস্য ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ব্যাপারে তৎপর হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়ে প্রায় ৮০ জনের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চেয়েছে দুদক। এ তালিকায় পংকজ নাথসহ চার সংসদ সদস্য (এমপি) এবং কর্মরত ১৪ জন ও সাবেক তিনজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। কর্মকর্তাদের অন্তত সাতজনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
দুদকের তালিকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ ১৪ কর্মকর্তা, সাবেক এক সংসদ সদস্য, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা এবং কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক রয়েছেন। তাঁদের অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের যে তথ্য দুদকের হাতে রয়েছে তা যাচাই করার জন্যই ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে। তাঁদের আয়কর নথিও সংগ্রহ করা হবে। দুদক যাঁদের তথ্য চেয়েছে, তা দেওয়ার জন্য কাজ করছে বিএফআইইউ। তথ্য-প্রমাণ ও নথি সংগ্রহ করার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন দুদক সচিব। তিনি বলেন, তদন্তের প্রয়োজনেই বিতর্কিত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেনের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বর্তমান সদস্যরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের মহাসচিব সামশুল হক চৌধুরী এবং সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। সাবেক সংসদ সদস্যের (সাতক্ষীরা) নাম ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমান।
সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি কোন খাতে কিভাবে হয় তা মোটামুটি সবার জানা। বড় দুর্নীতি সাধারণত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে হয়ে থাকে। দুই হাজার টাকার বেঞ্চ কেনা হয় সাড়ে ১১ হাজার টাকায়, ৫০০ টাকার বালিশ কেনা হয় সাত হাজার টাকায়, পাঁচ হাজার টাকার বৈদ্যুতিক পাখা কেনা হয় দেড় লাখ টাকায়। এমন উদাহরণের শেষ নেই। দেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের অভাব নেই। আছে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীও। প্রশাসন দুর্নীতিগ্রস্ত হলে তার নেতিবাচক প্রভাব বেশি বৈ কম নয়। বেতন-ভাতা-সুযোগ বাড়ানোর পরও সরকারি লোকজনের দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। অতএব তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। অভিযানকে আরো কঠোর ও বিস্তৃত করা হোক।