কাজিরবাজার ডেস্ক :
অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় এবার অংশ নিচ্ছে ২৬ লাখ ৬১ হাজার ৬৮২ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ছাত্র ১২ লাখ ২১ হাজার ৬৯৫ জন এবং ছাত্রী ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৭ জন। আগামী দুই নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এ পরীক্ষার জন্য আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হবে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এ তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, গত ১০ বছরে এ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১০ সালে যে সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৮০২ জন। এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা দুই লাখ ১৮ হাজার ২৯২ জন বেশি। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হকসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। এবারও জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং ফাঁসের গুজবমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা শেষ করার জন্য কোন প্রতারক যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য, মিথ্যা প্রশ্নপত্র তৈরি করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
পরীক্ষার্থীদের শুভকামনা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তোমরা সুস্থদেহে ও শান্ত মনে পরীক্ষা দেবে। অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনৈতিকভাবে কোন কাজ যেন না করেন। তারপরও যদি কেউ কোন অনৈতিক কাজ করতে যায়। তাহলে আমাদের গোয়েন্দা, র্যাব, পুলিশ বাহিনী সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে। এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটালে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
মন্ত্রী বলেন, দশমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য এ পরীক্ষায় আগের থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিমাণগত ও গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। ১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অনিয়মিত পরীক্ষার্থী দুই লাখ ৩৩ হাজার ৩১০ জন ও জেডিসি পরীক্ষায় ৩০ হাজার ২৯১ জন। জেএসসি পরীক্ষায় বিশেষ এক, দুই ও তিন বিষয়ে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী দুই লাখ ১১ হাজার ৩৩২ জন ও জেডিসিতে ২১ হাজার ৯৭৮ জন। এ বছর বিদেশে মোট নয়টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রগুলো- জেদ্দা, রিয়াদ, মদিনা, ত্রিপোলি, দোহা, সাহাম, বাহরাইন, আবুধাবি ও দুবাই। বিদেশের কেন্দ্রগুলোতে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫৪ জন।
এ পরীক্ষা উপলক্ষে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, উদ্যোগগুলো- পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে। যাদের হাত নেই তাদের জন্য শ্রুতি লেখক দেয়া হবে। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এবার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে।
এ জন্য নির্বাচনী বা প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। পাশাপাশি বৃত্তি পরীক্ষাও দিতে হবে না। পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে শিক্ষক ছাত্র, কর্মচারীদের মোবাইল, মোবাইলফোন সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম, ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ। পরীক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। কেউ প্রবেশ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেএসসি ও জেডিসি’তে পরীক্ষার্থীদের সাতটি বিষয়ে ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। ইংরেজী ছাড়া সকল বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। যদি কেউ এ সময়ের পরে আসে তবে তার কারণ ও যাবতীয় তথ্য লিখে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিতে হবে। সেই তথ্য পরীক্ষা শেষে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে পাঠাতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দেশে এখনও মাধ্যমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার অনেক বেশি। তবে প্রতিবছর ক্রমান্বয়ে এ হার কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ে ‘মিড ডে মিল্ক চালু এবং শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক আনন্দপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি বৃত্তি ও উপবৃত্তির হার এবং অর্থের পরিমাণও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষায় নিয়মিত ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে থাকে। কোন বছর অনিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হলে সংখ্যাগত দিক থেকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম দেখায়।