কৃষিশুমারির উদ্দেশ্য দেশের মোট কৃষিজমির পরিমাণ, কৃষিকাজে মানুষের সংশ্লিষ্টতার হার, পরিবারপ্রতি জোতজমির পরিমাণ, শস্য আবাদের পরিমাণ ও ধরন, গরু-ছাগল প্রভৃতি গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগি প্রভৃতির সংখ্যা, মাছ চাষের পরিমাণ, কৃষিসংশ্লিষ্টতার ধরন, কৃষি থেকে খানার আয় প্রভৃতি বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারকে কৃষি ও পশুসম্পদ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা। যেকোনো শুমারির উদ্দেশ্যই তা-ই, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সরকারকে সহায়তা করা। শুমারির তথ্য শুধু সরকারের কাজেই লাগে না, বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাজেও লাগে—গবেষণা থেকে শুরু করে কর্মসূচি প্রণয়ন পর্যন্ত। ব্যত্যয়ী পরিস্থিতি দেখা না দিলে ১০ বছর অন্তর একবার শুমারি করা হয়।
শুমারি সাধারণত সেই মৌসুমে বা সময়ে করা হয়, যখন অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর সব লোককে অথবা অভীষ্ট বিষয়সংশ্লিষ্ট সব লোককে পাওয়া যায় এবং তাদের কাছে পৌঁছানোর পথ সুগম থাকে। গত ৯ জুন সারা দেশে একযোগে কৃষিশুমারি ২০১৯-এর কাজ শুরু করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস); তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয় গত ২০ জুন।
প্রাথমিক তথ্যে হাইব্রিড ধানের হিসাব, কী পরিমাণ জমিতে ধান চাষ হয়, সেসব তথ্য নেই। অনেক জায়গায় ছাদ বাগানে শস্য উৎপাদিত হয়। এর পরিমাণ বাড়ছে; কিন্তু শুমারিতে এ বিষয়ক তথ্য নেই; ভাসমান মাচার ওপর কৃষিপণ্য উৎপাদনের তথ্যও নেই। ড্রাগন ফলসহ অনেক উঠতি ফসলের তথ্য নেই। ভবিষ্যতে কৃষিশুমারির প্রশ্নপত্র প্রণয়নে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বলেন, জরুরি অনেক বিষয় যুক্ত করা হয়নি। যেমন—দেশে ডিমের উৎপাদন কত, তা প্রশ্নপত্রে যোগ করা হয়নি। দুধ, মাছ ও মাংস উৎপাদনের বিষয়গুলো যুক্ত হয়নি। মিষ্টি ও নোনা পানির মাছের পরিমাণের তথ্য নেই। দেশের রপ্তানি আয়ের একটি অংশ আসে চিংড়ি থেকে। চিংড়ি উৎপাদনের তথ্য নেই। কৃষিশুমারিতে কিছু ত্রুটি থাকার কথা অস্বীকার করেননি পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক অপ্রচলিত ও উঠতি ফসলের প্রসঙ্গ বাদ পড়েছে। বাদ পড়া বিষয়গুলো ভবিষ্যতে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।
সরকারের নীতি-কৌশল প্রণয়নে যথাযথ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দরকার। বিবিএসের কাজ হচ্ছে সেসব নিশ্চিত করা। তা করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নে সমস্যা হবে। আর পরিকল্পনা ঠিক না হলে সুষম উন্নয়ন ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করা কঠিন। আমরা আশা করি, রাষ্ট্রের পক্ষে যাঁরা শুমারি ও জরিপ করেন, তাঁরা এ কথা বিবেচনায় রাখবেন।