দেশকে এগিয়ে নিতে দক্ষতাই জরুরী

15

আমলাতন্ত্রের উন্নাসিকতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে; কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। উন্নতি যে হয়নি, তার প্রমাণ বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ব্যবসা সহজীকরণ সূচক। এই সূচক তৈরিতে একটি দেশের ব্যবসাসংক্রান্ত পরিবেশকে ১০টি মানদণ্ডে বিচার করা হয়। এ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ঋণ পাওয়াসহ পাঁচটি মানদণ্ডে বাংলাদেশ ভালো করেছে, তিনটিতে একই আছে এবং দুটিতে আগের বছরের চেয়েও খারাপ করেছে। খারাপ হওয়া খাত দুটি হলো—সম্পত্তি নিবন্ধন এবং দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়া ও তার বাস্তবায়ন। উন্নতি করতে না পারায় সূচকে একই অবস্থানে আছে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রক্রিয়া বা নিয়ম-কানুন, চুক্তি সই ও বাস্তবায়ন এবং কর পরিশোধ। এ সবই সরকারি কর্মকর্তাদের এখতিয়ারে। অথচ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে সূচক উন্নয়নের জন্য। নতুন কম্পানি নিবন্ধনের খরচ কমেছে, ডিজিটাল সনদ ফি বাতিল করা হয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য জামানত ফি কমানো হয়েছে এবং দ্রুত সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার পরও আমলাতন্ত্রের জটিলতায় কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে না পারা সত্যিই দুঃখজনক।
বিশ্বব্যাংকের এই সূচকের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ কতটা আসবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মন্ত্রী-আমলাদের কথার চেয়ে এসব সূচককেই বেশি গুরুত্ব দেন। ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক এই সূচক তৈরি করে আসছে। গত বৃহস্পতিবার সারা বিশ্বে একযোগে এই সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১৬৮তম। আগের বছর ছিল ১৭৬তম। মন্দের ভালো যে বাংলাদেশ আট ধাপ এগোতে পেরেছে। তার আগের বছরগুলোতে বাংলাদেশ আরো পেছনে ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত। গত তিন বছরে তারা মোট ৬৭ ধাপ এগিয়েছে। এ বছর তাদের অবস্থান হয়েছে ৬৩তম। এ ছাড়া ভুটান ৮৯তম, নেপাল ৯৪তম, শ্রীলঙ্কা ৯৯তম, পাকিস্তান ১০৮তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানই একমাত্র দেশ যে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আমরা কত কিছুই না করছি। সফর, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রোড শো—আরো কত কী? কিন্তু দেশে আমলাতন্ত্রের একাংশের বদৌলতে আমরা যদি ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের বদলে আরো কঠিন করে তুলি, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ এ দেশে আসবে কেন? কেন কিছু সূচকে আমরা আগের বছরের থেকে পিছিয়ে যাব? এর সঠিক কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে হবে। আমলাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে যদি কেউ সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে না পারে, তাহলে তার অন্য যে আনুগত্যই থাকুক না কেন, তাকে রাষ্ট্রীয় কাজে রাখা ঠিক হবে না। দেশের আমলাতন্ত্রকে মনে রাখতে হবে, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের রাখা হয়নি। রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে তাদের কাজ করতে হবে।