স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাপসাতালে স্থাপিত ল্যাবে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল থেকে ‘রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন’ (আরটি-পিসিআর) পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়। পরবর্তীতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) স্থাবিতে ল্যাবে একই পদ্ধতিতে গত ১৯ মে থেকে শুরু হয় করোনা পরীক্ষা।
তবে এবার করোনার ‘অ্যান্টিজেন টেস্ট’ যুগে পদার্পণ করতে যাচ্ছে সিলেট। আগামীকাল শনিবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে বিশেষ এ পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে মানবশরীরের করোনা ভাইরাস।
ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শামসুদ্দিন হাসপাতালে অ্যান্টিজেন কিটও পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এ বিষয়ে শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) জানান, হাসপাতালটি ‘অ্যান্টিজেন টেস্ট’ পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
তিনি জানান, আগে যেভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হতো, সেভাবেই সংগ্রহ করা হবে। তবে কিছু নমুনা ‘অ্যান্টিজেন টেস্ট’র জন্য রেখে দেয়া হবে শামসুদ্দিনে, আর বাকিগুলো পাঠিয়ে দেয়া হবে ওসমানী হাসপাতাল ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেগুলো আগের মতো আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতেই পরীক্ষা করা হবে।
সুশান্ত কুমার মহাপাত্র আরও জানান, ‘অ্যান্টিজেন টেস্ট’র ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া আছে। তাই প্রথমদিকে ১০-১৫ নমুনা পরীক্ষা করা হবে ‘অ্যান্টিজেন টেস্ট’র মাধ্যমে। ধীরে ধীরে সে সংখ্যা বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে দুইজন ল্যাব টেকনিশিয়ানকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা হাসপাতালের আরও কয়েকজন নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ‘অ্যান্টিজেন টেস্ট’র মাধ্যমে প্রায় ২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
মানবশরীর থেকে রক্ত নিয়ে তা থেকে প্লাজমা আলাদা করে একটি কিটের মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্ত করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিজেন টেস্ট। আরটিপিসিআর টেস্টে শুধু সোয়াব দিয়ে করোনা শনাক্ত করা হতো এতদিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাস শরীরে থাকা মানেই শরীরে অ্যান্টিজেন থাকবে। ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেটাও শরীরে থাকে। রোগীর রক্ত পরীক্ষা করলে বোঝা যায় যে অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডিই দুটি আছে কিনা। সহজ করে বলতে গেলে অ্যান্টিজেনটা হচ্ছে ভাইরাস, আর অ্যান্টিবডি হচ্ছে ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেওয়ার একটা উপাদান। কারও মধ্যে ভাইরাসটি অবস্থান করলে অ্যান্টিজেন টেস্ট পজিটিভ আসবে। অ্যান্টিজেন থাকা মানে সে ভাইরাসে আক্রান্ত।
টেস্টের বিষয়ে তারা বলছেন, শরীর থেকে রক্ত নিয়ে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা করা হয়, সেই রক্তরস দিয়ে মূলত পরীক্ষাটি করা হয়। আরটি পিসিআর পরীক্ষার ক্ষেত্রে সোয়াব টেস্ট করা হয়, কিন্তু অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুধু রক্ত থেকেই হয়।
অ্যান্টিজেন টেস্টের সুবিধা প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিজেন টেস্টে ধরা যায় শরীরে করোনা ভাইরাস আছে কী নেই। পিসিআর পরীক্ষাতেও তাই জানা যায়, কিন্তু তাতে একটু সময় বেশি লাগে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় কোনও মেশিনের প্রয়োজন নেই, শুধু কিট দিয়ে দ্রুত সময়ে নির্ণয় সম্ভব। আর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা মূল্য সাশ্রয়ী। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফল পাওয়া সম্ভব।
এছাড়াও ব্যাপক হারে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত এবং করোনার সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিজেন টেস্ট ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। তাছাড়া হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভোগান্তি কমবে এবং চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হবার হার কমে যাবে।
অ্যান্টিজেন টেস্টে সময় প্রয়োজন হবে মাত্র ১৫ মিনিট এবং খরচও হবে অনেক কম। এছাড়াও অ্যান্টিজেন টেস্ট সিলেটে ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।