বাংলাদেশে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যাত্রী বা পথচারীদের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। এর একটি প্রধান কারণ মনে করা হয় এসংক্রান্ত দুর্বল আইনের দুর্বলতা। সড়কে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েও যানবাহনের চালক ও মালিকরা সহজেই পার পেয়ে যান। সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। সারা দেশে স্কুলের ছাত্ররাও রাস্তায় নেমেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রণয়ন করা হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এটি জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হলেও এত দিন তা কার্যকর করা যায়নি। মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন ধারা সংশোধনের দাবি উঠেছে। অনেক হুমকিও এসেছে। তা সত্ত্বেও কোনো রকম সংশোধন ছাড়াই ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কয়েক দশক ধরেই সড়ক পরিবহন আইন কঠোর করার চেষ্টা চলছিল; কিন্তু পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর বিরোধিতায় তা করা সম্ভব হয়নি। যখনই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখনই তারা পরিবহন বন্ধ করে জনজীবন অচল করে দিয়েছে। সেই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সরকার যে অনমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করেছে, তা জনস্বার্থ বিবেচনা থেকেই করা হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস। এখন আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন আইনে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। যেমন—বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তাহলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যাবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে নতুন আইনে ছয় মাসের জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা; ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য ছয় মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা; গাড়ির চেসিস পরিবর্তন, জোড়া দেওয়া, বডি পরিবর্তনের শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন আইনে মালিকদের জন্যও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ, শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, যানবাহন ও যাত্রীর বীমা করা, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যর্থতা থাকলে তার জন্য মালিকদের শাস্তি পেতে হবে।
পরিবহন খাতে বিদ্যমান নৈরাজ্যের অবসান অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন, ফিটনেস নবায়ন না করা কোনো গাড়িতে তেল বা গ্যাস সরবরাহ করা যাবে না তা-ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি, নতুন আইন বাস্তবায়নসহ হাইকোর্টের নির্দেশ পালনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।