কাজিরবাজার ডেস্ক :
নানা আলোচনা-সমালোচনার পর বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন আগামী এক নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী আইনে কোন ধরনের পরিবর্তন না করেই গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। আইনটি কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে বুধবার প্রজ্ঞাপন হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার তাগিদ দেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ১ এর উপধারা (২) এ দেয়া ক্ষমতাবলে সরকার ১ নভেম্বর থেকে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করল। আইনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকান্ডের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধানসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা রাখা হয়েছে।
গত বছরের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর গেজেট জারি করা হলেও তার কার্যকারিতা ঝুলে ছিল। গত বছর আগষ্টে আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় সরকার। ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর গত বছরের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর গেজেট প্রকাশ হয়েছিল। এরপর থেকেই পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের আপত্তির মুখে আইনটি কার্যকর করা যাচ্ছিল না।
গত বছর ঢাকায় বাসচাপায় দুই ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে আগের আইন কঠোর করে ২০১৮ সালে নতুন আইনটি করা হয়েছিল। এই আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।
নতুন আইন অনুযায়ী, মোটরযান চালনাজনিত কোন দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে এ সংক্রান্ত অপরাধ দন্ডবিধি-১৮৬০ এর এ সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে দন্ডবিধির ৩০৪বি ধারাতে যাই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোন দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
আইনের ১১৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপীল ইত্যাদির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) প্রযোজ্য হবে। কিন্তু গেজেট প্রকাশের পরও আইনটি কার্যকর না হওয়ায় আদালতে রিট আবেদনও হয়েছিল।
আইনটি প্রণয়নের পর থেকে তার প্রবল বিরোধিতা করে আসছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার মামলায় নতুন আইনে শাস্তির মাত্রা ‘অযৌক্তিক’ বেশি।
এরপর গত ২৫ সেপ্টেম্বর পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে উপ-কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইন সংশোধনের সুপারিশ সংবলিত একটি প্রতিবেদন জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। এরপরই আইনটি কার্যকরের তারিখ ঘোষণা হলো। গেজেট অনুযায়ী আগামী ১ নবেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা রইল না।
সড়ক পরিবহন আইনে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছেÑ ৯৮ ধারায় সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। আর গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করলে বা ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ক্ষেত্রে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইনে। এক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে দুর্ঘটনার প্রকৃতি। প্রতিবেদনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকান্ডের প্রমাণ পেলে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় শাস্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড। আর তদন্ত প্রতিবেদনে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে হতাহতের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সড়ক পরিবহন আইনের ১০৩ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৫ বছর জেল অথবা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড হতে পারে। অর্থদন্ডের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবেন।
নতুন এই আইনের বিষয়ে শ্রমিকদের দাবি ছিল সড়ক পরিবহন আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিকের কারাদন্ডের মেয়াদ ৫ বছরের বিধান বাতিল করতে হবে।